Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পায়ের পচন থেকে বাঁচতে চান ফাহিমা, দরকার অর্থ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০১৯, ০৬:৫৫ PM
আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯, ০৭:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ফাহিমা খাতুনের বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই, ভ্যান চালক স্বামীর অভাবি সংসার তার। বহু কষ্টে বেশ কিছু টাকা যোগার করে বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়ের। মেয়েদের পরের ঘরে পাঠানোর পরে বেশ কয়েক বছর কেটে গেলেও স্বচ্ছলতা ফেরেনি সংসারে। তবুও স্বামীর অল্প আয় দিয়ে কোনো রকমে কষ্ট সংসার সামলিয়ে দিন পার করছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় এখন অসহায়ত্বের কাছে হার মানতে হচ্ছে তাকে। কোনো এক ‘অজানা রোগে’ আক্রান্ত হয়ে দুই পায়ে পচন ধরেছে তার। খসে খসে পড়ছে পায়ের মাংস। আর স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে না পেরে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন স্বামী ফজিজুল ইসলাম।

ফাহিমা খাতুনের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে। প্রথমে বাম পা দিয়ে শুরু হলেও এখন ডান পায়েও পচন ধরেছে। পঁচে যাওয়া মাংস খসে খসে পড়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড দুর্গন্ধের সাথে বের হচ্ছে পুঁজ। মাঝে মাঝে পোকাও বের হচ্ছে। প্রচণ্ড জ্বালা-যন্ত্রণা নিয়েই সারাদিন শুয়ে-বসেই থাকতে হয় ফাহিমার। জ্বালা যন্ত্রণার ফলে ঘুমাতেও পারেন না। অন্যের সাহায্য ছাড়া পারেন না জরুরী প্রয়োজন মেটাতেও।

সার্বক্ষণিক দেখাশোনার করার জন্য পরিবার ছেড়ে মায়ের কাছে রয়েছেন ফাহিমার বড় মেয়ে সোনিয়া আক্তার। তিনি জানান, মাসখানেক আগে পায়ের ব্যথা শুরু হয় তার মায়ের। চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খেতে থাকেন। কিন্তু দিনে দিনে ব্যথা আর যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাথে দুই পা ফুলে যেতে থাকে। এর পর চিকিৎসকের কাছে নিলে চিকিৎসক পরীক্ষা করার কথা জানান। কিন্তু পরীক্ষা করে কোনো রোগ শনাক্ত করতে পারেননি চিকিৎসকরা।

তবে তারা ধারণা করছিলেন, পায়ের শিরা ব্লক হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসক তখন ফাহিমাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করাতে বলেন। কিন্তু অর্থাভাবে সেটা সম্ভব হয়নি তার। এরপর আস্তে আস্তে পায়ের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকলে এক পর্যায়ে চিকিৎসক পা কেটে ফেলতে বলেন। কিন্তু তার বাবার আপত্তির কারণে পা কেটে ফেলা হয়নি। বর্তমানে যশোরের এক হোমিও ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ খাচ্ছেন। এই ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা কিছুটা কমলেও পচন ধরা কমছে না। বাম পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে ও ডান পায়ের গোড়ালি থেকে পচন ধরা শুরু করেছে।

স্ত্রীর এমন রোগে দীর্ঘদিন ধরে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করছিলেন স্বামী ফজিজুল। কিন্তু দিনে দিনে স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় চিন্তায় তিনিও অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। ফলে পরিবারের একমাত্র রোজগার করা ব্যক্তির অসুস্থতায় অসহনীয় কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে পরিবারটির। বিছানায় শুয়ে কাতর ফজিজুল ইসলাম বলেন, একটা ভ্যানের আয় দিয়ে সংসার চলে তার। কিন্তু অসুস্থ থাকায় এখন দাঁড়াতেও পারছেন না তিনি।

ফাহিমা বেগমের এই অবস্থার শুরু থেকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন দেয়াড়া ইউনিয়নের স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য আকলিমা খাতুন। তিনি জানান, দুই শতক জমির ওপর কোনো রকমে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন তারা। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের কোনো উপার্জন না থাকায় এখন গ্রাম থেকে চাল সংগ্রহ করে তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকা থেকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সংগ্রহ করে তার দেয়া হচ্ছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাহিমা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সারাদিন বসে বসে কান্না করছি। আল্লাহ আমাকে কী রোগ যে দিছে। আমি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে চাই। আপনারা আমাকে একটু সাহায্য করেন।

দেয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি ফাহিমা খাতুনের অবস্থার কথা জেনে তাদের বাড়িতে গিয়ে কিছু চিকিৎসার সহায়তা করেছেন। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের একটি ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার ব্যবস্থা করছেন তিনি।

ফাহিমা বেগমের পায়ের ছবি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) এবং ডার্মাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদারের সাথে। তিনি জানান, সেলুলাইটিস সমস্যার কারণে এমনটা হতে পারে। এটা হলে পা পচে যেতে পারে, পুঁজ ও পোকা বের হয় এবং পা থেকে গন্ধ বের হয়। তবে সরাসরি না দেখে ভালোভাবে বলা যাবে না। ঢাকাতে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করালে ভালো হতে পারে। পা কেটে না ফেলেই চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা সম্ভব বলে জানান এই বিশিষ্ট চিকিৎসক।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, বিষয়টি সর্ম্পকে আমি অবগত নই। তাদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের তরফ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ০১৭০৪৬৬১৯৭২ (ফজিজুল), আকলিমা খাতুন (০১৭২১৮০৪২০০) নম্বরে।

Bootstrap Image Preview