Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে সিঙ্গাপুরের ৩ বিশেষজ্ঞ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:২৬ PM
আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:২৬ PM

bdmorning Image Preview


আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ।

রবিবার সন্ধ্যার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পৌঁছান তারা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নেমে রাত পৌনে ৮টার দিকে হাসপাতালে প্রবেশ করেন চিকিৎসকরা। সেখানে তাঁরা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে করছেন।

এ ব্যাপারে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

এর আগে বিকেলে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কের জানাতে ব্রিফিং করেন বিএসএমএমইউ'র চিকিৎসকরা। এসময় তারা জানান, ওবায়দুল কাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। তিনি চোখ খুলেছেন বলেও জানান তারা।

চিকিৎসকরা ওই সময় জানিয়েছিলেন, রাতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসবেন এবং তাদের সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের আলোচনার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এই মুহূর্তে বিদেশি স্থানান্তর করার মতো অবস্থাতেও তিনি নেই বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছিল। তবে সিঙ্গাপুর থেকে আসা টিম তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কোনো সমস্যা হলে সেটিকে কাভার দেয়ার মতো প্রযুক্তি, জনবল বা সরঞ্জামের নিশ্চয়তা দিতে পারলে তাকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তারা।

এদিকে রবিবার বিকেল পৌনে ৫টায় সর্বশেষ কাদেরের শারীরিক অবস্থা জানাতে ব্রিফ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য (ভিসি) ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘কেউ ডাকলে তিনি অবশ্যই রেসপন্স করছেন। তার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর এনজিওগ্রাম করে রিং পরানো হয়েছে। বন্ধ হওয়া নালী দিয়ে ফের রক্ত চলাচল শুরু হয়েছে। তার যে রিপার্কুইশন ইনজুরি হয়েছে, সেটা থেকে বের হতে সময় লাগবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন, চিকিৎসকরা যদি মনে করেন তাকে বিদেশে পাঠানো যায়, তবেই বিদেশে পাঠানো হবে। যদি চিকিৎসকরা মনে করেন বিদেশে পাঠানোর মতো অবস্থা তার নেই, তবে পাঠানো হবে না। এছাড়া যদি বিমানে ওঠার পর তার অবস্থার অবনতি হয় সেক্ষেত্রে সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো ইক্যুইপমেন্ট, এক্সপার্টিজ তাদের থাকে তবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে পাঠানো হবে, না হলে নয়।’

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল ঢাকায় আসছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে জানাতে পারে।’

দুপুরে ওবায়দুল কাদেরের হার্টবিট ৩০- এ নেমে এসেছিল কিনা জানতে চাইলে কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘তখন ৩০-এ নেমে এসেছিল কিন্তু এখন ৯০ থেকে ১১০ এ ওঠা-নামা করছে। আমরা তার সুস্থতার ব্যাপারে আশাবাদী।’

সংবাদ সম্মেলনে কার্ডিওলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আহসান বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওবায়দুল কাদেরের হার্ট অ্যাটাক হয়। এ সময় তার বাসা থেকে আমাদের কাছে খবর পাঠানো হয়। আমাদের একজন চিকিৎসক তার বাসায় যান। তিনি প্রাথমিকভাবে দেখার পর কার্ডিওলোজির আইসিইউতে নিয়ে আসেন। নিয়ে আসার পর তার শরীরে তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। ইসিজি করতে করতে তার অবস্থা খরাপ হতে থাকে। তখন আমরা এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেই। এনজিওগ্রাম করে তার তিনটি রক্তনালীতে ব্লক পাই। আগে থেকে ডায়াবেটিসে তার অবস্থা খারাপ ছিল।

যে তিনটি ব্লক পাওয়া গেছে তা ক্রিটিক্যাল। এগুলোর একটি ১০০ ভাগ, একটি ৯৯ ও একটি ৮০ ভাগ ব্লক। এর মধ্যে ৮০ ভাগের ব্লকটিতে রিং পরানো হয়েছে। অন্য দুটি ব্লক রয়েছে। রিং পরানোর পর দুই ঘণ্টা তার অবস্থা ভালোই ছিল। তারপর থেকে অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। ব্লাড প্রেসার কমে যেতে থাকে এবং ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়ে যেতে থাকে। তিনি চোখ খোলেন না এবং কথা বলেন না। ক্রিটিক্যাল স্টেজে চলে যান। এরপর তাকে আমরা আইএমপি যন্ত্র দেই। হেমোডাইনামিক স্ট্যাবিলিটি আমলে নিয়ে আমরা তাকে পরবর্তী থেরাপি দেব বা বাইপাস সার্জারি করতে পারি। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত তার ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ড. সৈয়দ আলী আহসান আরও বলেন, ‘কেউ যদি তাকে বিদেশে নিতে চান, নিতে পারেন। তবে তাদের ওই রকম ম্যান পাওয়ার থাকতে হবে, যেন তারা তাকে স্ট্যাবল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।’

কার্ডিওলোজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী বলেন, ‘হার্টের রোগীর যে কোনো সময় ছন্দপতন ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে শরীরিক অবস্থা খারাপের দিকেও যেতে পারে যে কোনো সময়।’

এর আগে সকালে বুকে ব্যথা অনুভূত হলে দ্রুত ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিসিইউ) ২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন তিনি।

সকাল থেকেই তাকে দেখতে হাসপাতালের ডি-ব্লকের সামনে ভিড় করেন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে রোববার বেলা ৩টা ৩৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন তিনি। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তিনি বেরিয়ে যান।

বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে হাসপাতালে আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পৌনে ৫টার দিকে তিনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন।

বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদেরের পাশে কিছু সময় কাটান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন তারা। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এ সময় ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসার সার্বিক বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদেরের আশু আরোগ্য কামনা করেন এবং তার রোগমুক্তির জন্য দেশবাসীর প্রতি প্রার্থনার আহ্বান জানান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন বলে জানান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় হাসপাতালে ভিড় না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন বলেও তিনি জানান।

Bootstrap Image Preview