Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পলাশের কুকর্ম নিয়ে মুখ খুললেন পুলিশ সুপার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৪২ PM
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০০ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খি উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় নিহত যুবক পলাশের বিরুদ্ধে একের পর এক অপরাধের অভিযোগ উঠছে। এবার তার অপরাধ নিয়ে কথা বললেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, পলাশ আহমদের বিরুদ্ধে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। যেহেতু তার (পলাশ) বাবা-চাচারা দেশের বাইরে থাকেন, তাই তার খোঁজ নেয়ার মতো তেমন কেউ ছিল না। এলাকার সহজ-সরল লোকদের বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে সে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে।

পলাশের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে পুলিশ সুপার জানান, পলাশের পরিবার জানিয়েছে তাদের বাসায় দুইবার অভিনেত্রী সিমলা এসেছিল এবং তারা বিবাহিত বলেও দাবি করা হয়। এ ছাড়া তার অন্য কোনো বিষয় জানতো না পরিবার। পলাশ মূলত পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতো সব সময়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সে মাদরাসার ছাত্র ছিল। দাখিল পাস করার পরেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। তার বাবা মায়ের কাছ থেকে জানা যায়, বিভিন্ন চলচ্চিত্র টিমের সঙ্গে কাজ করতো বলে জানায় পলাশ। ঘটনার আগে গত শুক্রবার দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাসা ছাড়ে সে। পরবর্তীতে পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীরা ব্যাপারটি জানালে পরিবার তাদের ছেলের ব্যাপারে নিশ্চিত হন।

তিনি আরও জানান, পলাশের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই তবে জানতে পেরেছি অতীতে নারীঘটিত একটি মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে। এলাকার লোকজনের সঙ্গে সে তেমন মিশতো না। এছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে দুবাইয়ে লোক পাঠানোর কথা বলে পলাশ প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাই তারা তাকে প্রতারক হিসেবে চিনতো।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আমরা আপাতত তথ্য নিশ্চিতের কাজ করেছি। র‌্যাব থেকে তাকে আসামি দাবি করা হলেও আমরা সেই তথ্য পাইনি, তবে র‌্যাবের দাবিকে ভুল বলছি না। সে আসামি হতেও পারে। মামলা নারায়ণগঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাই আমরা ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারবো না। তবে যদি তদন্তের স্বার্থে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয় তখন বিস্তারিত আরও জানার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

এদিকে পলাশের বাবা পিয়ার জাহান বলেন, ১৯৯০ সালে কাজের উদ্দেশ্যে তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে চার বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। পরে তিনি আবার সৌদি আরব চলে যান। ২০১২ সালে তিনি দেশে ফেরেন।

তিনি বলেন, এর মধ্যে ছেলে পলাশ মাহমুদ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। দাখিল পাস করে সে সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। শুনেছি পলাশ নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছিল। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে এলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশত না, কথা বলত না।

পিয়ার জাহান বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে চিত্রনায়িকা সিমলাকে নিয়ে রাতের বেলা বাড়িতে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর আবার সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিয়ের কথা সিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়।

তিনি বলেন, আমরা সিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি অবাধ্য ছিল।

সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে।

প্রসঙ্গত, রবিবার বিকেলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি এক ‘অস্ত্রধারী’ যুবক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। পরে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী ওই অস্ত্রধারীকে ধরতে কমান্ডো অভিযান পরিচালিত হয়। এরপর ছিনতাইকারীর নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে রুদ্ধশ্বাস এই অভিযান শেষ হয়।

Bootstrap Image Preview