বড়বোন নিখোঁজ হওয়ার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রতিবন্ধী তিন ভাই বোন জগলুল (১৬), রিক্তা বেগম(২২) ও সুমা বেগম (১৮)। ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তার সন্ধান মেলেনি সুনামগঞ্জ শহরতলীর নতুনপাড়ার বাসিন্দা মধ্যবয়সী কোটিপতি মহিলা রিপা বেগমের
প্রসঙ্গত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই মহিলা নিখোঁজ রয়েছেন। এরপর পরিবারের লোকজন সদর মডেল থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন।
নিখোঁজ রিপা বেগমের ভাই মোস্তাক আহমদ বলেন,‘ আমি ১১ বছর পূর্বে ইতালী যাবার দু’বছর পরই বাবা মারা যান। দেশে ফিরে আসার পর ২০১৭ সালে বড় বোনের (রিপা) সহায়তায় বিয়ে করে আলাদা সংসার করছি। একইভাবে ছোট বোন রুনাকেও বিয়ে দেন আমার বড় বোন। অথচ তিনি (রিপা বেগম) নিজে সংসার করেননি প্রতিবন্ধী ৪ ভাই-বোনের জন্য। এখন তিনি না থাকায় প্রতিবন্ধী ভাই বোনদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ ওদের স্কুলে নিয়ে যেতে হয়, স্কুলে বসে থেকে আবার বাসায় নিয়ে আসতে হয়। এই কাজ আমার বৃদ্ধ মায়ের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সদরগড় গ্রামের মৃত গোলাপ আলী ও আজিজুন নেছার বড় মেয়ে রিপা বেগম। গোলাপ আলী’র ৫ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ৪ ভাই বোনের মনি বেগমকে মা আজিজুন নেছার কাছে রেখে প্রতিবন্ধী বোন রিক্তা, সুমা ও ভাই জগলুলকে নিয়ে সকাল সাড়ে ৯ টায় শহরের মহিলা কলেজ রোড এলাকার সুনামগঞ্জ অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলে নিয়ে যেতেন রিপা বেগম। ২ টায় স্কুল ছুটি হলে ওদের আবার বাসায় নিয়ে ফিরতেন। অভিভাবক হারা এই তিন প্রতিবন্ধী এখন আর স্কুলে যায় না।
অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক রুমা বেগম বললেন,‘ সুমা বৃত্তিমূলক এবং মনি ও জগলুল বিশেষ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বড়বোন রিপা নিখোঁজের পর থেকে ওরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
রিপা’র ভাই মোস্তাক সোমবার বললেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর পৈতৃক সম্পত্তি থেকে পাওয়া টাকা খাটিয়ে আয় যা হয়েছিল তা বড়বোনের কাছেই ছিল। এখন বোনও নেই, তার মতো এভাবে কেউ প্রতিবন্ধী ৪ ভাই বোনকে সময়ও দেবে না। স্কুলে যাওয়াও হবে না ওদের। এদের এখন খেয়ে বেঁচে থাকাই দায় এমনকি স্কুলেই বা নিয়ে যাবে কে?’
নিখোঁজ নারীর পারিবারীক সুত্র জানায়, সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়া আবাসিক এলাকা থেকে ৩৮ বছর বয়সি ধণাঢ্য মহিলা রিপা বেগম রহস্যজনক ভাবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পর তার বাসায় ব্যবহৃত ওয়াড্রব’এর ড্রয়ার থেকে কোটি টাকার অর্থলগ্নির হিসাব এবং ২৫ থেকে ৩০ জন ঋণ গ্রহিতাদের চেক ও জমির দলিল পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন নিখোঁজের স্বজনরা। তারা মনে করছেন, আর্থিক লেনদেনের কারণেও ওই মহিলাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে। অথবা কোন অপহরণকারী চক্র তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সদরগড় গ্রামের মৃত গোলাপ আলী ও আজিজুন নেছার বড় মেয়ে রিপা বেগম।
২০১০ সালে বাবা গোলাপ আলী মারা যাবার পর বাবার টাকা দিয়ে অর্থলগ্নি’র (দাদন ব্যবসা) ব্যবসা করতে থাকেন ওই মহিলা। ভাই-বোনদের প্রতিবন্ধী স্কুলে পাঠানোর জন্য ৪ বছর হয় নতুনপাড়ার নিলয় ১৯/২ নম্বর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসাবে ওঠেন এই নারী।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি শহীদুল্লাহ্ বলেন,‘ পুলিশের প্রাথমিক ধারণা মধ্যবয়সি মহিলা কোন পুরুষের হাত ধরে পালাবে না, তবে যেহেতু মহিলার অর্থলগ্নি’র ব্যবসা ছিল ওই সূত্র ধরে কী কারণে বা কীভাবে মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন তা খোঁজে বের করার পুলিশী চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।