Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পিলখানা ট্রাজেডির ১০ বছরেও প্রতিশ্রুত প্লট পায়নি শহীদ নুরুল ইসলামের পরিবার

সুলতান মাহমুদ আরিফ, পুরান ঢাকা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০২:২৮ PM
আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০২:২৮ PM

bdmorning Image Preview


আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। পিলখানা ট্রাজেডির ১০বছর পূর্ণ হলো। বিডিআর বিদ্রোহের বিচারও সম্পন্ন হতে চলেছে। অপরাধীরা বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাচ্ছে।

অন্যদিকে বিদ্রোহে শহীদ সেনা সদস্যদের পরিবারসমূহকে সরকার ও সেনাবাহিনীর তরফে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এতগুলো বছর পার হয়ে গেলেও বিদ্রোহে শহীদ একমাত্র বিডিআর সদস্য, তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের পরিবার অন্যান্য সুবিধা পেলেও এখনও পায়নি স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্লট।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সময় সশস্ত্র জওয়ানদের নৃশংসতায় ৫৭জন সেনা কর্মকর্তাসহ বিডিআরের একমাত্র সদস্য, তিনি ৪ বার ডিজি পদকপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম শহীদ হন।

শহীদ সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বিদ্রোহের পক্ষে জওয়ানদের ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যেও একমাত্র আমার বাবা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। পিলখানায় সবাই যখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বাবা তখন বিপথগামী সশস্ত্র জওয়ানদেরকে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে যান, পরে আমার বাবাকে বিদ্রোহীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে গণকবরে নিক্ষেপ করে। আর এর স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার আমার বাবাকে শহীদ ঘোষণা করেছে।’

তিনি আরও জানান, ‘শহীদের পরিবার হিসেবে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ও বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু ১০ বছর হয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় প্লট একমাত্র আমরা এখনও পাইনি।’

সূত্র জানায়, বিডিআর বিদ্রোহে শহীদের পরিবার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় প্লট প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পত্র প্রেরণ করা হয়।  

প্লট প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৩ সাল হতে বিভিন্নভাবে চিঠি লেখালেখি হলেও বিষয়টির কোন সমাধান হয়নি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মহাপরিচালক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানালে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে আমাদের প্লট পাওয়ার বিষয়টি দ্রুত সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ আমরা পুনরায় আবেদন করি, যেটি ১২ মার্চ ২০১৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরণের জন্য বিজিবি সদরদপ্তর থেকে বিডিআর  বিদ্রোহে শহীদদের পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্থায়ী পুনর্বাসন সুবিধার আওতায় শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের পরিবারকে সংরক্ষিত কোটায় (প্লট) উত্তরা, ঝিলমিল অথবা পূর্বাচল প্রকল্পের যে কোন একটিতে ৫ (পাঁচ) কাঠার ১টি প্লট প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর পূর্বের ন্যায় গত ৬ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রাউজকে পূর্বের ন্যায় সুনির্দিষ্ট নির্দেশ না দিয়ে বিষয়টির কোন সমাধান করতে বলে।

বিষয়টি গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবসে মহাপরিচালক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিষয়টি জানালে পূনরায় বিজিবি হতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংযুক্ত পত্রের আলোকে পুনরায় ব্যাবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ্য করে চিঠিটি পূর্বের ন্যায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।
প্লট প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৩ সাল হতে বিজিবি সদরদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি আদান প্রদান হলেও বিষয়টির কোন সমাধান হয়নি।

সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন বিজিবি মহাপরিচালক গণমাধ্যমে বলেন, যে প্লট পাওয়ার বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী একটি প্লট দিবেন বলে আবারও বিজিবি মহাপরিচালকে জানিয়েছেন।

শহীদ নুরুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগম বলেন, আমার ৪ সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সর্বদায় আমি মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকি। আমি দীর্ঘদিন লিভার সিরোসিস এ আক্রান্ত। আমার ও আমার সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর মতো বর্তমানে আপন কেউ নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষীত স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে তাঁর সহযোগিতা কামনা করেন।

Bootstrap Image Preview