কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলার পর সেখানে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে ভারত সরকার। রীতিমতো সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে দেশটির সেনাবাহিনী। বাড়ি বাড়ি চলছে তল্লাশি।
হাটে, পথে-ঘাটে গণধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার রাতভর অভিযান চালিয়ে দেড় শতাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা-কর্মী আটক করেছে সেনা সদস্যরা।
এর আগে সেখানে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্সের ১০ হাজারের বেশি সদস্য পাঠানো হয়। রাস্তায় রাস্তায় সেনাদের তল্লাশি ও রণপ্রস্তুতিতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কাশ্মীরিদের মধ্যে। যদিও রোববার রাজ্য গভর্নর সত্য পাল মালিক জানিয়েছেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গুঞ্জনের কারণেই আতঙ্ক আরও বাড়ছে।’
পুলওয়ামাকাণ্ডের পর থেকেই আতঙ্কে আছেন কাশ্মীরিরা। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাবনাই ঘুরছে উপত্যকার বাসিন্দাদের মাথায়। জানা গেছে, জওয়ানদের ডিউটিও ভাগ করে দেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল বর্ডারের দায়িত্বে থাকছে বিএসএফ জওয়ানরা।
জম্মু-কাশ্মীরের ভেতরে সিআরপিএফ জওয়ান ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ পরিস্থিতি অনেকের মনেই যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। তবে পুলিশ ও সেনা সদস্যরাই উপত্যকায় আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছেন। পথে পথে তল্লাশি চালাচ্ছেন তারা। রোববার শ্রীনগরের রাস্তায় রাস্তায় স্কুটি, মোটরগাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।
রাজ্য গভর্নর জানান, ‘কাশ্মীরে কিছু নিরাপত্তা অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে কারফিউ ও অন্যান্য পদক্ষেপের বিষয়ে গুঞ্জন কানে নেয়া উচিত নয়।’ জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শনিবার রাতে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, কাশ্মীরে আতঙ্ক সৃষ্টির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। রাজনাথ আমাকে ব্রিফ করেছেন।
আমি তাকে কাশ্মীরিদের আশ্বস্ত করতে বিবৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। একদিকে সরকার বলছে, আতঙ্কের কিছু নেই। অন্যদিকে কাশ্মীরিদের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। শনিবার দুটি পৃথক নির্দেশনায় হাসপাতাল ও খাদ্য অধিদফতরকে প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়েছে।
কাশ্মীরে মোতায়েন সমস্ত জওয়ানের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রোববার পেট্রল পাম্প, ওষুধের দোকান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানে ভিড় জমান কাশ্মীরিরা। শ্রীনগরের মুদাসসির বলেন, ‘মনে হচ্ছে লড়াই শুরু হতে পারে। তাই জ্বালানি, ওষুধ, খাবার মজুদ রাখা ভালো।’
লাল চকের এক পেট্রাল পাম্প মালিক জানান, সকাল থেকে কয়েকশ’ গাড়িতে পেট্রাল ভরেছি। শ্রীনগরের মেডিকেল কলেজে বাতিল হয়েছে সব কর্মীর শীতকালীন ছুটি। সোমবারের মধ্যে হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহ করতে সব জেলাকে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে, পাক-ভারত চলমান উত্তেজনার মাঝে শনিবার আরেক বোমা ফাটালেন সাবেক পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। আরব আমিরাতের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন চরম পর্যায়ে। যে কোনো সময় যুদ্ধের সম্ভাবনা।
আর যুদ্ধ শুরু হলে একসঙ্গে ৫০টি বোমা হামলা ছাড়া ভারতকে ঠাণ্ডা করা যাবে না। তার বক্তব্য, পাকিস্তান যদি একটি পরমাণু বোমা ফেলে, ভারত পাল্টা ২০টি পরমাণু বোমা ফেলবে। পাকিস্তান যদি প্রথমেই ৫০টি পরমাণু বোমা দিয়ে হামলা চালায় তাহলে আর ভারত ২০টি পরমাণু বোমা ফেলার সুযোগ পাবে না।’