Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ছিলো তিন কোটি টাকার পারফিউম গ্যাস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:০৭ PM
আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


রাজধানীর চকবাজারে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে ভস্ম হওয়া ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রায় তিন কোটি টাকার পারফিউম গ্যাস ছিল। দেশের বাহিরে থেকে আমদানি করে আনা পারফিউম গ্যাস এখানে বিভিন্ন মাপের বোতল, ক্যানে রিফিল করা হতো। অগ্নিকাণ্ডের মাত্র দুদিন আগেই আনা হয়েছিল ওই বিপুল পরিমাণের পারফিউম গ্যাস। স্থানীয় অন্য ব্যবসায়ী, বাড়িওয়ালা, দোকান কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

যে বিস্ফোরণের মাধ্যমে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঠিক কোথা থেকে হয়েছে সে বিষয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে না পারলেও তাদের সকলের দাবি, আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছিল মূলত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকেই।

গণ মাধ্যমে কথা বললেও নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না এখন কেউই। কাছাকাছি থাকেন এমন এক বাড়িওয়ালা ওই গোডাউনের একজন কর্মচারীর বরাত দিয়ে বলেন, ঘটনার দুই দিন আগে তিনি সেই কর্মচারীর কাছ থেকে জেনেছেন, চীন থেকে পারফিউমের গ্যাস আনা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার। ওই রাতেই ভবনের দ্বিতীয় তলায় গ্যাসগুলো ঢোকানো হয়। আর গ্যাস রিফিল করার জন্য এক সপ্তাহ আগেই প্রায় ৫০ হাজার পারফিউমের ক্যান আনা হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন ওই কর্মচারী।

তারই বরাতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি আরও বলেন, এই পারফিউম বিক্রি করে আট থেকে দশ কোটি টাকা মুনাফার প্রত্যাশা ছিলো তাদের। এই গোডাউনে মোট চারজন কাজ করতেন এমনটা জানিয়ে ওই বাড়িওয়ালা বলেন, ‌‌‌’তবে আগুনের ঘটনার পর ওই ছেলেটাকে আর দেখিনা। কি জানি সে রাতে আগুনে পুড়ে মারা গেছে কিনা আল্লায় ভালো জানে। ছেলেটা খুব হাসিখুশি আর মিশুক ছিল।’

কার এ গোডাউন? কিংবা কে তার মালিক? সে প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি। তবে সোহেল নামের একজনের কথা বলেছেন অনেকেই। ‘শুনছি ওই বাড়ির বড় ছেলে সোহেলই এই ব্যবসা চালাতেন। সত্য-মিথ্যা কতটুকু তা জানিনা। তবে তারা খুব প্রভাবশালী। দুই তিনবার সোহেল জেল-জরিমানাও খাটছে লৌহজং কোম্পানি নামের একটা কোম্পানির নাম ব্যবহার করে এসব নকল ব্যবসা করার জন্য,’ বলেন স্থানীয়দের একজন।

‘গিয়ে দেখেন তাদের বাসার নিচের গ্যারেজে কত কোটি কোটি টাকার কেমিক্যাল। শুনছি ৭০ কোটি টাকার মত কেমিক্যাল ওই গ্যারেজে,’ যোগ করেন তিনি।

সেই দোকান কর্মচারীর বরাতে অপরজন বললেন, ‘এসব কেমিক্যাল ভবনের নিচে এমনভাবে রাখা হয়েছে যে এর দরজা ভেদ করে আগুন পানি কিছুই ভিতরে যেতে পারবে না। এখন তো তাই হলো, নিচের গোডাউনে কিন্তু আগুন যায়নি, বলেন দুজনই।

চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের একজন নিয়মিত মুসল্লি আবদুল্লাহ সাঈদ। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে প্রায়শই মসজিদে আসার সময় বাজে একটা গন্ধ পেতাম। দিন কয়েক আগে পাশের একটা টুপির দোকানে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করছিলাম।

তিনি বলছিলেন, গোডাউনে মেয়াদউত্তীর্ণ পারফিউমের গ্যাস স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে বাইরে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য এমন গন্ধ। আমার মনে হয় একারণে আগুনের ভয়াবহ চিত্র, বলেন ও ব্যক্তি। তিনি বলেন, সেটা না হলে আগুন এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়ার অন্যকোনো কারণতো দেখিনা ভাই। তবে গোডাউনে মালিক কে তা তিনি জানেন না বলেই জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতের সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৮ টি মরদেহ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো ডিএনএ টেস্ট এর মাধ্যমে শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Bootstrap Image Preview