Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বোন মরল ক্যান্সারে, আর ভাই মরল আগুনে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০৬ PM
আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০৬ PM

bdmorning Image Preview


রাজধানীর নবকুমার ইনস্টিটিউটের এইচএসসিতে লেখাপড়া করতো ওয়াসি উদ্দিন মাহিদ। সম্প্রতি চকনাজারে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছিল মাহিদ। কিন্তু ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিল তার প্রাণ। তাকে হারিয়ে বাড়িজুড়ে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

ওয়াসির বাবা মো. নাসিরুদ্দিন রাজধানীর চকবাজারের ব্যবসায়ী। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। তবে সংসারে প্রথম কষ্ট এসেছিল ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আগে বড় মেয়ে আজরীন (২২) ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর। তারপরেও দুই মেয়ে আনহা (২৬), সারজা (১৫) ও একমাত্র ছেলে মাহিদকে নিয়ে কেটে যাচ্ছিল সন্তানহারা নাসিরুদ্দিনের দিন।

কিন্তু গত বুধবার রাতে একমাত্র ছেলে ওয়াসি উদ্দিন মাহিদ চুড়িহাট্টার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার পর বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মেয়ের পর অগ্নিকাণ্ডে ছেলেকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় এ ব্যবসায়ী।

মাহিদের বাবা মো. নাসিরুদ্দিন বলেন, আমার ছেলে তার মায়ের জন্য মিনারেল ওয়াটার কিনতে বাসা থেকে বের হয়, বোধ হয় চুড়িহাট্টার মোড় পর্যন্তও আসতে পারেনি, গাড়ি বিস্ফোরণের সময়ই হয়তো ও মারা যায়, আমরা মাহিদের মরদেহ মোটামুটিভাবে ভাল পেয়েছি। এখন এটাই আমার সান্তনা।

তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মিনিট পাঁচেক আগেও আমি চুড়িহাট্টার মোড়ে ছিলাম। আমি পাশের এলাকা রহমতগঞ্জে গেলাম আর বিস্ফোরণের শব্দ পেলাম। আমি বুড়া হয়ে গেছি। মারা গেলেও হইতো, কিন্তু আল্লাহ কেন আমার তরুণ ছেলেটাকে নিয়া গেলো? আমি আর কতো সহ্য করবো, ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ব্লাড ক্যান্সারে বড় মেয়েকে হারাই।

প্রসঙ্গত, গত রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঝরে গেছে ৬৭টি তাজা প্রাণ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। ঘটনার পর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা জোর দাবি তুলেছেন আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল দ্রব্যের সব দোকান-গুদাম সরিয়ে নেওয়া হোক।

কিন্তু স্থানীয়দের যৌক্তিক দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সাফাই গাইছেন কেমিক্যালের পক্ষে। তাদের দাবি, কেমিক্যাল থেকে সব ধরনের ব্যবহারিক পণ্য তৈরি হয়। কেমিক্যাল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী না, গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনার কারণ। দেশ থেকে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা হোক।

আজ শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন চুড়িহাট্টা এলাকা পরিদর্শনে এলে ব্যবসায়ীরা কেমিক্যালের পক্ষে নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। এসময় মেয়র তাদের যৌক্তিক সমাধানের আশ্বাস দেন।

চুড়িহাট্টা এলাকার জুয়েলারি ব্যবসায়ী হাজী আব্দুর রশিদ বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ঝরে যাচ্ছে প্রাণ। আমরা চাই দেশ থেকে সব গ্যাস সিলিন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হোক।

কেমিক্যালের কারণে আগুন এলাকাটিতে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এটা অস্বীকার করেন তিনি। তার মতে, কেমিক্যাল নয় সব কিছুর জন্য দায়ী গ্যাস সিলিন্ডার।

হাজী মুসলিম নামে অন্য ব্যবসায়ী বলেন, কেমিক্যাল থেকে সব কিছু তৈরি হয়। কেমিক্যাল থেকে কোনো দুর্ঘটনা আজও ঘটেনি। ইজতেমা ময়দান থেকে শুরু করে সব জায়গায় গ্যাস সিলিন্ডার কেড়ে নিয়েছে প্রাণ। আমরা এই গ্যাস সিলিন্ডার চাই না।

তবে কেমিক্যালের কারণে গত বুধবারের (২০ ফেব্রুয়ারি) ঘটনায় আগুন মুহূর্তে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, ঝরে পড়ে ৬৭টি তাজা প্রাণ-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেমিক্যালের জন্যই আপনি সব পোরতাছেন, সাজের জিনিস পাইতাছেন।’

তবে ব্যবসায়ীদের দাবির সঙ্গে একমত নন এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, আবাসিক এলাকায় আর কোনো মরদেহ দেখতে চায় না, কেমিক্যালমুক্ত এলাকা চায়।

মোমেনা আহমেদ নামে অর্ধবয়সী এক নারী চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, কেমিক্যাল নামে ভয়ানক পদার্থ আর আবাসিক এলাকায় চায় না। কেমিক্যাল না থাকলে ওই দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতো বেশি হতো না। আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল দোকান, গুদাম বন্ধ হওয়া উচিৎ।

সাইদুল ইসলাম নামে অন্য বাসিন্দার মতে, সিলিন্ডার সব সমস্যার কারণ হতে পারে না। গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার দেখতে হবে তার মেয়াদ আছে কিনা। আমারও গাড়ি আছে সিলিন্ডারে চলে। নিয়মিত সার্ভিসিং করতে হবে, সতর্ক হতে হবে। ব্যবসায়ীরা সতর্ক না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখন তারা সিলিন্ডার নিয়ে নতুন ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছে।

Bootstrap Image Preview