আগুনে পুড়ে অঙ্গার ধ্বংসস্তুপের মাঝে প্রিয়জনের মরদেহ খুঁজতে যখন ব্যস্ত সবাই তখন দেখা গেল এক সার্জেন্ট তার মোটরসাইকেলটি খুঁজছেন। সার্জেন্টের বুকপকেটে নাম লেখা - তৈয়েবুর রহমান তপু। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে তৈয়েবুর রহমান তপুকে চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তুপে নিজের মটরসাইকেলটি খুঁজছিলেন।
মটরসাইকেলটি খুজেঁ পাওয়ার পর কথা হয় সার্জেন্ট তপুর সঙ্গে। তিনি জানান, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। সৃষ্টিকর্তার ওপর শুকরিয়া জানিয়ে সার্জেন্ট তপু বলেন, ‘আজরাইলকে দেখলাম। তবে তিনি আমাকে নেননি। ভাগ্যগুণে আমি বেঁচে গেছি। ওদের মতো আমিও পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারতাম।’
অন্যদিনের মতো বুধবার রাতে সার্জেন্ট তৈয়েবুর রহমান তপু ঢাকার সোয়ারীঘাটে দায়িত্ব পালন শেষে মোটরসাইকেলে করে চকবাজারের চুড়িহাট্টার গলি হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে আসার পর তিনি দেখেন, গলিতে ভয়াবহ যানজট। গলিতে ঠাসা মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কার ও ঠেলাগাড়ি। রাত সাড়ে ১০টার পর হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পান তৈয়েবুর।
তৈয়েবুর বলছিলেন, বিস্ফোরণের পর আমি যেখানে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই, সেই জায়গাটা রাজ্জাক ভবন থেকে ২০-২২ ফুট দূরে। আমি বাইক থেকে পড়ে গিয়ে যদি বাইক উঠতে যেতাম, তাহলেই পুড়ে মরতাম।
নিজের বাইকটি দেখিয়ে তৈয়েবুর বললেন, মোটরসাইকেলটি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আমারও একই অবস্থা হওয়ার কথা ছিল। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
সার্জেন্ট তৈয়েবুর বলেন, আমি তখন মসজিদের সামনে। বিকট আওয়াজের পর দেখি চারদিকে আগুন, পড়ে গেলাম। কীভাবে আমি যেন মসজিদের বাঁ পাশের চাপা গলি দিয়ে দৌড় দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি, চুড়িহাট্টা গলির রাস্তার সব গাড়ি পুড়ছে, ভবন পুড়ছে। আগুন থেকে বেঁচে যাওয়ার পরই তৈয়েবুর বাসায় ফেরেননি। রাত তিনটা পর্যন্ত চুড়িহাট্টা গলিতে দাঁড়িয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছেন তিনি।
তৈয়েবুর বললেন, বিকট আওয়াজের ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে চুড়িহাট্টার গলিতে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। আমি যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে ১০ হাত দূরে থাকলে দৌড়ে পার পেতাম না। সঙ্গে সঙ্গে আগুনে পুড়ে আমি ওদের মতো লাশ হয়ে পড়ে থাকতাম।
এ দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশপাশের ঘর বাড়ি, ফ্যাক্টরি সব কিছু পুড়ে গেলেও অক্ষত আছে চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদ।মসজিদটি দেখছে আসছে কৌতূহলী মানুষ। কেউ কেউ বলছে, ‘এ মহান আল্লাহর অপার রহস্য'।
গতকাল বুধবার রাতে আগুনের সূত্রপাত মসজিদের মূল গেটের সামনে থেকেই। এ আগুনের লেলিহান শিখায় মসজিদের চারপাশের ৩০০ হাত এলাকার সব বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে ছাই। কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে সুউচ্চ ভবনগুলোও। এর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ। জনমনে গভীর বিস্ময় জাগিয়ে মসজিদটি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।