অসংখ্য মানুষের ভিড় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গের সামনে। কেউ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কাঁদছেন, আবার কেউবা স্বজনদের ছবি হাতে নিথর মাটিতে বসে আছেন; দুচোখ দিয়ে অঝরে ঝরছে জল। চারিদিকের বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ স্বজনদের ছবি নিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন; মোবাইলে ছবি দেখিয়ে খুঁচ্ছেন স্বজনদের। বৃহস্পতিবার ঢামেক হাসপাতালের মর্গ ও জরুরি বিভাগ এলাকায় এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।
জানা গেছে, আগুনের সূত্রপাত হওয়া রাজ্জাক ভবনের সামানে ৩টি মোটরসাইকেলে ছয়জন ছিল। তাদের ছয়জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে রোহান ও সিয়াম নামের অন্য দুইজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ওই এলাকার বাসিন্দা মো. মাহিরকে খুঁজে পাচ্ছে না তার পরিবারের লোকজন। ভাই মাহিরকে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বোন নূর এ আনহা।
এদিকে জহির উদ্দিন নামের একজনও নিখোঁজ রয়েছেন। তার খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ঘুরছেন ভাগ্নে রিফাত নেওয়াজ। আগুনে জহির উদ্দিনের দোতলা বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রিফাত জানায়, জহিরের মুঠোফোন বাজলেও কেউ রিসিভ করছে না।
গিয়াস উদ্দিন নামের আরেকজন এসেছেন তার ভাবির খোঁজে। অগ্নিকাণ্ডের পর ভাবি নিখোঁজ রয়েছেন বলে তিনি জানান। চুড়িহাট্টার একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন গিয়াসের ভাবি।
খেলনার দোকানের মালিক আবদুর রহিম। আগুন লাগার সময় দোকান বন্ধ করছিলেন। কিন্তু তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন তার ভাই ইসমাইল।
ছেলে এনামুল হককে খুঁজছেন স্টেশনারি দোকান ওয়াসিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক আমজাদ হোসেন। ঢাকা মেডিকেলে ছেলের খোঁজে এসেছেন আমজাদ হোসেন। সোনিয়া, স্বামী মিঠুসহ ভাগ্নে শাহিদ ওই পথ দিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রায়হান নামে তাদের এক ভাই এ তথ্য জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে আছে পরিবেশ। কিন্তু মর্গে যেসব লাশ রয়েছে সেগুলো শনাক্ত করা যাচ্ছে না। লাশগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তবে স্বজনদের কেউ কেউ আকার আকৃতি ও বিভিন্ন চিহ্ন দেখে লাশ শনাক্তের দাবি করছেন। কেউ কেউ মোবাইলে তুলে রাখা ছবি দেখিয়ে লাশ শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
নিহত অনেকের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ।
তিনি বলেন, ‘অনেকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। কারও কারও চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে তাদের পরিচয় পেতে সময় লাগবে।’
বুধবারের ওই আগুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যে ৭০ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে ৬১ জন পুরুষ, পাঁচজন নারী ও চার শিশু রয়েছে।