চকবাজারে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সর্বেশষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮১ জনে দাঁড়িয়েছে। ৭ জন নারী ও ৪ জন শিশুসহ পুরুষ নিহত হয়েছেন ৭০ জন। উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিস সুত্র জানায় ঘটনাস্থল থেকেই ৭০ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন যায়গা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহতের ঘটনা ঘটেছে আরও ১১ জন। সংশ্লিষ্টসুত্রগুলো বলছে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও নিহতের আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী সামন্ত লাল জানান, লাশগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে যে কঙ্কালের মতো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে লাশগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে।পুড়ে যাওয়া লাশের চেহারাও চেনা যায় না। কেমিক্যালের মতো দাহ্য পদার্থে পুড়ে গেলে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে যায়।
বেলা এগারোটা ত্রিশ মিনিটে এক প্রেস ব্রিওফিং’এ ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, অন্তত ৩০ জনের লাশ তাঁদের স্বজনেরা শনাক্ত করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে। এক-তৃতীয়াংশ লাশ পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এসব লাশ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্তের কাজ করতে হবে। পুলিশের নির্দেশ পেলে বাকি লাশগুলোর ময়নাতদন্তের কাজ করা হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ৬৭টি ব্যাগে করে লাশ এসেছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত। এ ছাড়া আরও তিনটি ব্যাগে লাশের খণ্ডিত অংশ আনা হয়। নিহত ৭০ জনের লাশ এখন রয়েছে ঢামেক মর্গে। এদিকে লাশের সন্ধানে হাজারো স্বজন ভিড় করছেন মর্গের আশপাশে। কেউ আহাজারি করছেন। স্বজনকে জীবিত অথবা মৃত খুঁজে পেতে কেউবা এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছেন।
ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ লাশের পরিচয় মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। কেমিক্যালে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং দ্রুত পুড়িয়ে ফেলে। এ কারণে লাশগুলো শনাক্ত করা কঠিন হবে বলে মনে করেন বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল।
প্রসঙ্গত, পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন ‘পুরো ভবন খুঁজে দেখা হচ্ছে আর কোনো লাশ আছে কি না। আমরা মনে করছি, আরও কয়েকজনের লাশ থাকতে পারে। পুরো ভবনটি খুঁজে দেখার পর তা সঠিকভাবে বোঝা যাবে।
ভবনে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আইজিপি বলেন, ভবনটির নিচ তলাতে রাসায়নিক গুদাম ছিল। এছাড়া নিচতলায় কয়েকটি গাড়িও ছিল, যেগুলো গ্যাসে চলাচল করে। এই আগুনের কারণে গাড়িগুলো বিস্ফোরিত হয়। আরেকটি গাড়ি ছিল, যার ভেতর ছিল অনেকগুলো সিলিন্ডার। ওই সিলিন্ডার হয়তো আশপাশের বাড়িতে ও হোটেলে গ্যাস সরবরাহের জন্য ছিল। মূলত ওই গাড়ি থেকেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। এ কারণে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট অব্যাহতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে। এ ছাড়া তিনটি হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি দেওয়া হয় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশার জন্য’।