রাজধানীর চকবাজার চুড়িহাট্রা এলাকায় রাজ্জাক ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী অন্তত ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে আরো অর্ধশতাধিক।
আগুনের সূত্রপাতের বিষয় বিএনসিসি ক্যাডেটের এক ভোলান্টিয়ার বাকি বিল্লাহ বলেন, প্রথমে একটি ট্রাক থেকে আগুন লাগে। ট্রাকে থাকা সিলিন্ডার ফেটে সামনের ট্রান্সমিটারে যায়। সেখান থেকে পাশের বিল্ডিং'এ। সেই বিল্ডিং'এ পারফিউমের বোতল আর ক্যামিকেল ছিল বিধায় আগুন দ্রুত ছড়ায় আর সামনের বিল্ডিংএ চলে আসে। সামিনের বিল্ডিং এ এক দোকানে ২১ জন একসাথে সাটার ফালায় দেয় বাঁচার জন্য। কিন্তু একসাথে ২১ জনই পুড়ে যায়। পাশের ফার্মেসিতে একসাথে ৪ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয়রাও প্রায় একই কথায় বলছেন।
আগুনের সূত্রপাতের বিষয় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনালের আলী আহাম্মেদ খান বলেন, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সুত্রপাত।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা আদিল জানান, চুড়িহাট্টা বড় মসজিদের সামনে থাকা প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার শুনে তারা বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। এসে দেখেন একটি পাঁচতলা ভবন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আগুনের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, তারা ওই এলাকায় ঢুকতে পারেননি। তিনি বলেছেন, ওই ভবনের নিচ তলায় একটি প্লাস্টিকের গোডাউন ও কারখানা ছিল।
তিনি বলেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণে ভেবেছিলাম বোমা ফেটেছে। দৌড়ে এসে দেখি প্রাইভেটকারে আগুন জ্বলছে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাশের হোটেল ও কেমিক্যালের গোডাউনে ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষ দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে।
তিনি কমপক্ষে ১৫/২০ জনকে আহত অবস্থায় দেখতে পান বলে জানান। তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, ওয়াহিদ ম্যানসনের পাশের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের শতাধিক কর্মীসহ অনেকেই এখানে কাজ করছেন। নগরবাসী, দেশবাসী সবার দোয়া চাচ্ছি, যাতে করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ভবনটিতে প্রথমে আগুন লাগে, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি, পেছনের একটি এবং সরু গলির বিপরীত পাশের দুটি ভবনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পরপরই চার তলা ভবনটির সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটে, ওই সময় রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়।
হায়দার বক্স লেনের একজন বাসিন্দা বাশার বলেন, আগুনের সময় রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন লেগে ভবনে ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর ১০টি ইউনিট সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা ৩৭টিতে গিয়ে ঠেকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০০ জন।
এর বাইরে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি হেলিকপ্টার নিয়ে বিমানবাহিনীও যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে।
পুরান ঢাকার ওই সংকীর্ণ সড়কে ভবনগুলোর ছোট ছোট কক্ষে আগুন জ্বলতে থাকায় তো নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছিল বলে জানান অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান।
ভোররাতে একবার আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনার পরও আবার তা ছড়িয়ে পড়েছিল।
সকাল ৯টার দিকে আগুন আয়ত্তে আনার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক শাকিল নেওয়াজ।
তখন ভবনের ভেতরে ঢুকে একের পর এক লাশ বের করে আনছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সেখানে একটি তথ্য কেন্দ্র খুলে বোর্ডে সর্বশেষ তথ্যও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভেছে বলে ঘোষণা আসে ফায়ার সার্ভিসের, তার আধা ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন মেয়র খোকন।