Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন মা জরিনা বেগম ও কামরুন নাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০২:৫৩ PM
আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৩:৪৮ PM

bdmorning Image Preview


রাজধানীর চকবাজার চুরিহাটারা এলাকায় আবাসিক ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী অন্তত ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এ ঘটনায় স্বজনদের আহাজারীতে ভারি হয়ে উঠছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিবেশ। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে কান্নার রোল। একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ যেন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।

সন্তানের ছবি হাতে হাসপাতালে সামনে কাঁদতে দেখা যায় মা জরিনা বেগম ও কামরুন নাহারকে। স্বজনদের হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।  সন্তান শোকে থেকে থেকে মুর্ছা যাচ্ছেন মা কামরুন নাহার।

চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের আগে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিন ভাই অপু, আলী ও ইদ্রিস। ছোট ভাই ইদ্রিস দোকানের চাবি বড় ভাইদের বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান। দোকানের পাশেই খেলছিল অপুর (৩২) তিন বছরের ছেলে আরাফাত। বিস্ফোরণ অপু-আলী- আরাফাত তিনজনই মারা যান। তাদের মরদেহ শনাক্ত করেছেন ছোট ভাই ইদ্রিস।

নিহত দুই ভাই অপু ও আলীর মরদেহ আলাদা করতে পারেননি উদ্ধারকারী সদস্যরা। তারা দু'জন একে অপরকে জড়িয়ে ছিলেন। এ অবস্থায়ই তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হাসপাতালে পাঠানোর পর দেখা যায়, দুই ভাইয়ের মরদেহের মাঝে রয়েছে শিশু আরাফাতের মরদেহ।

আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই হয়তো দুই ভাই আরাফাতকে মাঝে রেখে একে অপরকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলে ধারণা করছেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ও উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।রকারী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

এছাড়া তুহিন নামের একজন কেঁদে কেঁদে মোবাইলে তার পরিবারকে জানান, আব্বা আমি তুহিন, এনামুল পুইড়া মইরা গেছে। আমি আর রাজীব খুঁইজ্যা খুঁইজ্যা ঢাকা মেডিকেল মেডিকেল এসে তাকে খুঁইজ্যা পাইছি।

এনামুলের পুরা নাম কাজী এনামুল হক অভি। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বিবিএ পড়েছেন। রূপালী ইনস্যুরেন্সে ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। এনামুলের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ। তিনি ওই এলাকাতেই থাকতেন। রাতে দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। সম্পর্কে তুহিনের ভাতিজা এনামুল।

আরেক স্বজন, মোহাম্মদ বাবু(২০) নামের একজন তার বাবাকে হারিয়ে মেডিকেলের সামনে বসে বিলাপ করছিলেন। তার বাবার নাম সিদ্দিকুল্লাহ। তার বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে। তিনি চকবাজারে কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন। একটি হোটেলে খেতে ঢুকেছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ। কিন্তু সেই হোটেল থেকে আর বেরুতে সক্ষম হননি তিনি।

একটি মসলা কোম্পানিতে কাজ করতো বাবা মো. জুম্মন। তার দুই ছেলে রাশেদ ও রাব্বী। হাসপাতালের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। রাশেদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এতগুলো মানুষ পুড়ে মারা গেল। এটা সহ্য করার মতো নয়।

এ বিষয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে ৭৮ জনের লাশ এসেছে। এর মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৭ জন নারী ও ৫টি শিশুর লাশ। লাশগুলো শনাক্তের সুবিধার্থে নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা এসে শনাক্ত করতে পারলে তাদের নম্বরগুলো জানানো হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview