ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে মার খেয়েই জঙ্গি দলে যোগ দেয় ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলাকারী আদিল আহমেদ দার। এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের।
গত বৃহস্পতিবার পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর যাত্রাবহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। বিস্ফোরক ভর্তি একটি গাড়ি নিয়ে সেনা কনভয়ে হামলা করে জম্মু-কাশ্মীরের লেথিপোরার ২০ বছর বয়সী যুবক আদিল দার। ওই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আত্মঘাতী হামলাকারী আদিল আহমেদ দারের কৃষক বাবা গুলাম হাসান দার জানিয়েছেন, ‘সেনাসদস্যদের ঘরে আজ যে যন্ত্রণা, আমার ঘরেও আমরা সেই একই যন্ত্রণা ভোগ করছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে স্কুল থেকে ফেরার সময় বন্ধুদের সঙ্গে আদিলকে একবার আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করেছিল ভারতীয় সেনারা। ওর বিরুদ্ধে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ ছিল। সেনার হাতে মার খাওয়ার পরেই ও জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।’
আদিলের মা ফাহমিদা বলেন, ‘বছরখানেক আগে স্কুল থেকে ফেরার সময় আদিলকে সেনাসদস্যরা মারধর করে। তারপর থেকেই সেনাদের ওপর আদিলের রাগ ছিল। তবে কীভাবে ও জঙ্গি দলে ভিড়ে গেল তা বুঝতে পারিনি। গত বছরের মার্চ থেকে আমরা ওর খোঁজ পাইনি।’
গুলাম হাসান দার আরো বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী নেতারা। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে না করলে এই রক্ত ঝরবেই। রাজনীতির জন্য আমাদের ছেলেরা জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ওর তো দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। জম্মু গিয়েছিল, কিন্ত আর ফিরল না। আর ফিরবেও না আদিল।’
স্কুল থেকে পালিয়ে রাজমিস্ত্রীর কাজ। হঠাৎই জঙ্গি শিবিরে নাম লেখানো। তালিবানি শাসনের কট্টর সমর্থক হয়ে পড়া। গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের প্রস্তুতি। আদিল আহমেদের নামই হয়ে যায়, ‘গাড়ি টাকরানেওয়ালা।’ গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। তাই অপারেশনের জন্য আদিলকেই দায়িত্ব দেয় জইশ-এ-মহম্মদ। গাড়ি ব্যবহার করে বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ নেওয়া ছিল। আফগানিস্থানে জঙ্গি শিবিরে এই প্রশিক্ষণের পর নতুন নাম হয় আদিল আহমেদ দারের। ‘গাড়ি টকরানেওয়ালা’ নামেই তাকে চিনত অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। একই সঙ্গে সামনে এল জইশ জঙ্গির তালিবান কানেকশন। জইশ-এ-মহম্মদের কট্টর জঙ্গি। তবে তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলত আদিল আহমেদ দার ওরফে ওয়াকাস।
পুলওয়ামায় হামলার পরেই হামলার দায় স্বীকার করে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যার পেছনে ছিল জৈশ-ই-মহম্মদের পতাকা আর সামনে সাজানো ছিলো আগ্নেয়াস্ত্র।
জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ জানিয়েছে, পুলওয়ামার গুন্ডিবাগে থাকতো আদিল। তার দুই ভাই রয়েছে। মাঝপথেই সে স্কুলের লেখাপড়ায় ইতি টেনে রাজমিস্ত্রি হিসাবে কাজ শুরু করে। পরে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে ছেলের জঙ্গি সংগঠনে যোগদানের কথা জানতে পারেন বাবা গুলাম দার।