ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বৃহস্পতিবার এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। প্যামপোর শহরে ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের বহন করা একটি বাসের ওপর বিস্ফোরকবোঝাই একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে অন্তত ৪৪ সেনা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পাক-ভারত সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হামলার পর দিল্লি পাকিস্তানকে একঘরে করার যে ঘোষণা দেয় তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে দেশটি।
বৃহস্পতিবারের ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মুহম্মাদ। এরপর থেকেই পাকিস্তানকে তুলাধুনো করছে ভারত। এমনকি দেশটিকে বিশ্ব থেকে একঘরে করতে সব ধরনের ব্যবস্থা করার হুমকি দিয়েছে নয়াদিল্লি। যদিও পাকিস্তান বলছে, ওই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তবে ভারতের এ আলোচনায় বাধা দিচ্ছে চীন। কেননা নিরাপত্তা পরিষদের এই শক্তিশালী দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বেশ মাখামাখি।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে এই বিষয়ে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়। সেখান থেকেই এ নিয়ে কাজ শুরু করার নির্দেশনা আসে।
হামলার পরদিন শুক্রবার মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এক বিবৃতিতে বলেন, কাশ্মীরের ওই হামলায় পাকিস্তানের ‘সরাসরি হাত’ রয়েছে। আর এ সংক্রান্ত ‘অকাট্য প্রমাণ’ তাদের কাছে আছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাকিস্তানকে একঘরে করতে ভারত সব রকম কূটনৈতিক চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।
কাশ্মীরের ইতিহাসে ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদ। আর এই সশস্ত্র সংগঠনটির প্রধান মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যপারে ভারত অনেকদিন ধরে চেষ্টা করলেও চীনের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়, যেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ অনুমোদন কমিটিতে সন্ত্রাসীদের তালিকা যে প্রস্তাব করা হয়েছে তারা যেন তাতে সমর্থন দেয়। প্রস্তাবিত ওই তালিকায় জঈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি করছে ভারত।
এর আগে উরিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের হামলা এবং ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর পর সেনাবাহিনীকে জরুরি ভিত্তিতে ট্যাংক-ঘাতক ক্ষেপণাস্ত্র, রাইফেল, গোলাবারুদ ইত্যাদি কিনতে হয়েছিল। কিন্তু তার দাম মেটাতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঁড়ে মা ভবানী।
২০০১ সালে সংসদে আজমাল কাসাবদের হামলার পর তৎকালীন বাজপেয়ী সরকার নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিপুল সংখ্যায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ৫ লক্ষ জওয়ান, তিনটি ট্যাংক-সজ্জিত ডিভিশন ও তাদের সঙ্গে স্ট্রাইক কোর মোতায়েন করতে তিন মাস সময় লেগে যায়। ততো দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখার উল্টো দিকে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে ফেলেছে। সেই ‘অপারেশন পরাক্রম’এ ১০ মাস পর সেনা প্রত্যাহার করতে হয়।
এর পরই ‘কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন’ অর্থাৎ সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় দ্রুত সেনা মোতায়েনের রণকৌশল তৈরি করে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়ত আগেই জানিয়েছেন, সেই নীতি মেনে এখন ৮ থেকে ১০ হাজার সেনা, কামান, ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, ঘাতক হেলিকপ্টার নিয়ে আট থেকে দশটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ব্যাটল গ্রুপ’ বা ‘আইবিজি’ তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু তার জন্য আরও অর্থ দরকার।
সেনা সূত্রের বক্তব্য, যথেষ্ট যুদ্ধের ট্যাংক নেই। স্বয়ংচালিত কামান, আকাশ হামলা থেকে ট্যাংক বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’-এর অভাব। আর পুরো দমে যুদ্ধ হলে দুই সপ্তাহের আগেই গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাবে।
বিমানবাহনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বীরেন্দ্র সিংহ ধানোয়া বলেছেন, অনুমোদিত ৪২ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমানের মধ্যে মাত্র ৩১ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান রয়েছে। এস-৪০০, রাফাল যুদ্ধবিমান এলে ঘাটতি কিছুটা মিটবে। কিন্তু ৪২ স্কোয়াড্রনও পাকিস্তান ও চীনকে একসঙ্গে টক্কর দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়।