Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ কি?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:০৭ PM
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১২:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


আর কিছুক্ষন পরেই ইয়াবার উৎসভূমি হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের অন্তত ১২০ জন ইয়াবা কারবারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তবে আত্মসমর্পণের পর এই ইয়াবা কারবারিদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্নিষ্ট কোনো বিভাগ থেকে। এ নিয়ে আত্মসমর্পণকারীদের পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

সর্ব প্রথম দুই মাস আগে পুলিশের 'সেফহোমে' চলে যায় আবদুল করিম (৩২) নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বাড়ি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী গ্রামে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আবদুল করিমের পরিবারের সদস্যরা জানান, সেফহোমে যাওয়ার পর থেকে দুটি মাস তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শুনেছি শনিবার (আজ) সকালে তাদের টেকনাফে আত্মসমর্পণ মঞ্চে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু এরপর তার কী হবে, সে বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য পাইনি। ফলে এ নিয়ে পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন। জানি না কবে পরিবারের মাঝে ফিরে আসবেন তিনি।

আত্মসমর্পণের পর তাদের কী হবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে মনিটর করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের নিচের লেভেলে থাকা কর্মকর্তারা কিছু বলতে পারছেন না। তবে প্রথমে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। কী প্রক্রিয়ায় তাদের আদালতে পাঠানো হবে সেই বিষয়টি বলতে নারাজ এ কর্মকর্তা।

আত্মসমর্পণের জন্য সেফহোমে থাকা ইয়াবা কারবারিরা অঝরে কাঁদছেন। সেখানে থাকা এক ইয়াবা কারবারি বলেন, 'অন্ধকার জগৎ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সেফহোম চলে যাই। শনিবার আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া নিয়ে খুবই টেনশনে আছি। শুনেছি ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে আমাদের আত্মসমর্পণ করানো হবে। তা যদি হয়, স্বাভাবিক জীবনে ফিরব কীভাবে। এমন তো কথা ছিল না? ঘরে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধ মায়ের কী হবে। কে দেখভাল করবে তাকে।' এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তবে আত্মসমর্পণ নিয়ে কাজ করছেন এমন এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আত্মসমর্পণের পরে তাদের আদালতে মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। যেহেতু স্বেচ্ছায় তারা আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছেন, ফলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

সচেতন মহলের ধারণা, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও রয়েছে নানা সন্দেহ। এ প্রক্রিয়ায় ইয়াবা গডফাদাররা পার পেয়ে যাচ্ছে কি-না এবং তাদের অবৈধ পথে অর্জিত সম্পদ বৈধ হতে যাচ্ছে কি-না, এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

স্থানীয় এক সংবাদ কর্মী বলেন, যেসব ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করছেন, সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। ইয়াবা ব্যবসা সমূলে বন্ধ করতে আত্মসমর্পণের বাইরে থাকাদের যত দ্রুত সম্ভব আইনের আত্ততায় আনার দাবি জানান।

আত্মসমর্পণে বদির চার ভাইসহ অনেকে :

আজ শনিবার(১৬ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে প্রতীকী ইয়াবা ট্যাবলট ও অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন এই ১২০ জন। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন গডফাদার। তাদের মধ্যে রয়েছেন টেকনাফের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির চার ভাই- আবদুল আমিন, আবদুর শুক্কুর, মোহাম্মদ সফিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল, ভাগিনা সাহেদুর রহমান নিপু এবং বেয়াই শাহেদ কামাল। আরও রয়েছেন টেকনাফ সদরের এনামুল হক মেম্বার, ছৈয়দ হোসেন মেম্বার, শাহ আলম, আবদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নূরল বশর নুরশাদ, কামরুল হাসান রাসেল, জিয়াউর রহমান, মোহাম্মদ নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুছ, ছৈয়দ আহমদ, রেজাউল করিম, নুরুল হুদা মেম্বার, দিদার মিয়া, জামাল হোসেন মেম্বার, মোহাম্মদ শামসু প্রমুখ।

এদিকে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস বলেন, 'আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মঞ্চসহ সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে এখনও যেসব ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Bootstrap Image Preview