রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে শুরু করেছে। সচল হয়েছে আইসিইউ বিভাগও। এরই মধ্যে এই হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা রোগীরাও ফিরতে শুরু করেছেন। তবে অনেকে চরম ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন। এখনো পোড়া গন্ধ সব জায়গাতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে আগুন লাগার পর রাত ১০টার পরপরই চালু করা হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। পরে আজ শুক্রবার সকাল থেকে বাকি বিভাগগুলোর কার্যক্রমও চালু করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কর্তব্যরত নার্সরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর হওয়া রোগীদের মধ্যে কম সংখ্যকই ফিরে আসছেন। দুপুর পৌনে একটার দিকে ২ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে মাত্র ১৩ জন রোগি ফিরে এসেছেন। যেখানে রোগি ছিলেন ৩৯ জন। অন্যান্য ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। এদিকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম বড়ুয়া সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছেন।
শুক্রবার সকালে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, আজ সকাল থেকেই হাসপাতালের কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। হাসপাতালের কার্যক্রম শতভাগ শুরু না হলেও যে বড় ধরনের আগুন লেগেছিল, তা বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান কার্যক্রমকে স্বাভাবিকই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
তারা বলছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ সবাই পুরোদমে কাজ শুরু করেন। সবার প্রচেষ্টায় রাতেই শুরু করা যায় জরুরি বিভাগ। এর মধ্যে রাতে বৈদ্যুতিক সংযোগ ফিরে এলে ধীরে ধীরে অন্য বিভাগ ও ওয়ার্ডগুলোকেও সচল করা হতে থাকে।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা রোগীদের পাশের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) স্থানান্তর করা হয়েছিল। তাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসিইউতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। হাসপাতালের প্রায় ১১শ রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মিটফোর্ড, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর, তাদের শুক্রবার সকাল থেকেই নিয়ে আসা হচ্ছে। বাকিরা ধীরে ধীরে ফিরবেন এই হাসপাতালে। শুক্রবার সকাল নাগাদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের প্রায় সব বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। আগুনে হাসপাতালটির ১০ থেকে ১২টি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে সবার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে তা শতভাগ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে আগুনের ফলে কার্যক্রম যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকই বলা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, তৃতীয় তলার স্টোর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় ও নিচ তলায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।