তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কোন রকম তোয়াক্কা না করেই চলছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ’দেবী’। ছবিটি গতকাল মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচার করার প্রতিবাদে আজ মাছরাঙা টেলিভিশনের সম্মুখে বাংলাদেশের তামাকবিরোধী সকল সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন শুরু অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বাংলাদেশের তামাকবিরোধী প্রায় ১৮টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। কিছু সময় পরেই মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব প্রোগ্রামের নেতৃৃত্বে অনেকে এসে মানববন্ধনে সরাসরি বাঁধা প্রদান করে। পরে হেড অব প্রোগ্রাম মানববন্ধনের অংশগ্রহণকারীদের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও আক্রমাণাত্মক প্রশ্ন করা শুরু করেন। পরবর্তীতে মানববন্ধনের অংশগ্রহণকারীদের ছবি তুলে রাখার নির্দেশ দেন এবং সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
সংগঠনগুলোর পক্ষে বিভিন্ন বক্তারা ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ ভঙ্গ করে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ’দেবী’ চলচ্চিত্রের বিশেষকরে ধারাবাহিৎকভাবে ধুমপানের দৃশ্য প্রদর্শনের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জানান। ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ আইনের ৫ (ঙ) ধারায় বাংলাদেশের তৈরি বা লভ্য চলচ্চিত্র, সিনেমা, নাটক ও প্রামাণ্যচিত্রে ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুধুমাত্র কাহিনীর প্রয়োজনে তা ব্যবহার করলেও সঠিকভাবে আইন মেনে তা করা হয়নি। কারণে-অকারণে বারবার ধূমপানের দৃশ্য ব্যবহার করা এ ধরনের সিনেমার মাধ্যমে ধূমপানে উৎসাহিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম ও যুব সমাজ যা দেশের তামাকবিরোধী, জনস্বাস্থ্য ও উন্নয়ন কর্মীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়ায় সংগঠনগুলো একযোগে কর্মসূচি বাস্তবায়তন করে আসছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে ও তার পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ জাতীয় প্রেস ক্লাব হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বারবার নিন্মুক্ত দাবিগুলো উত্থাপন করে আসছে-
১. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সুস্পষ্টভাবে লংঘন করায় বক্তারা অনতিবিলস্বে দেবী সিনেমার প্রদর্শন ও টেলিভিশনে প্রচার বন্ধ করতে হবে; তবে প্রয়োজনীয় অংশে সংশোধন বা সংস্কার করে তা প্রচার করা;
২. চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির বানিজ্যিক প্রচারনাবন্ধ করতে হবে;
৩. দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে।
পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অগ্রাহ্য করায় দেবী সিনেমাসহ দর্শকদের এধরনের সকল চলচ্চিত্রগুলিকে বয়কট করার আহ্বান জানান।
একই সাথে মানববন্ধনে বক্তারা পরিচালক, প্রয়োজক, পরিবেশকসহ অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে এ ধরনের চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ থেকে বিরত আহ্বান জানান এবং প্রধাণমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
দেশের ১৮টি সংগঠনের সমন্বয়ে তামাকবিরোধী জোটের এই শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে দেশের স্বনামধন্য টলিভিশনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অযাচিত আক্রমণ ও অশোভন ব্যবহার অংশগ্রহণকারীদের হতবাক করে দিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য প্রতিটি কার্যক্রম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হতে অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে পরিচালিত হচ্ছে ও দাবীগুলো নিয়মিতভাবে স্মারকলিপির মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর প্রদান করা হচ্ছে। এ ধরনের অযাচিত আক্রমণ ও অশোভন ব্যবহারে বাংলাদেশের তামাকবিরোধী সকল সংগঠন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।