Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজধানীতে নতুন আতঙ্ক ‘চিরকুট পার্টি’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:০৯ AM
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:০৯ AM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী


রাজধানীতে নতুন এক অপরাধ চক্রের আবির্ভাব ঘটেছে। এ চক্রের নাম ‘চিরকুট পার্টি’। চক্রের সদস্য রাস্তার পাশে মাইক্রোবাস নিয়ে ওতপেতে থাকে। এদের একজন ছদ্মবেশে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সামনে চিরকুট ধরিয়ে তা পড়ে শুনানোর অনুরোধ জানায়।

ওই ব্যক্তি যখন চিরকুটটি তাকে পড়ে শুনাতে মনোযোগ দেন, ঠিক তখনই চক্রের অন্য সদস্যরা পেছন থেকে তাকে ঝাপটে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর চেতনানাশক দিয়ে অচেতন করে রাখা হয়। তার সঙ্গে থাকা অর্থকড়ি লুটে নিয়ে ওই ব্যক্তিকে নির্জন স্থানে ফেলে দেয়া হয়। আবার কাউকে তুলে নিয়ে গোপন আস্তানায় আটকে রেখে আরও অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়।

নগরীতে এ চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন মানুষ। চক্রের খপ্পরে অনেকেই পড়ছেন। কিন্তু বাড়তি ঝামেলার কারণে সবাই থানা-পুলিশ পর্যন্ত যান না। সর্বশেষ এ চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্মর্তা তৌহিদুজ্জামান। নিখোঁজের তিন দিনের মাথায় টাকা-পয়সা খুইয়ে তিনি চক্রের কবল থেকে সোমবার ভোরে মুক্ত হয়েছেন।

তৌহিদুজ্জামানের বাসা উত্তরায়। তিনি চাকরি করেন হংকংভিত্তিক নিউ টাইমস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামক একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে সিনিয়ার মার্চেন্ডাইজার পদে। প্রতিষ্ঠানটির অফিস বনানী থানার কামাল আতাতুর্ক রোডে অবস্থিত সুবাস্তু সুরিয়া ট্রেড সেন্টারে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বের হন অফিস থেকে। রাত পৌনে ৮টায় বনানী ১১নং রোডে সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে স্ত্রীর কার্ড দিয়ে ৩০ হাজার টাকা তোলেন।

এর আধাঘণ্টা পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান স্বজনরা। সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করে হদিস মেলেনি তার। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সহযোগিতা চান স্বজনরা। তাদের পরামর্শ দেয়া হয় বনানী থানায় যোগাযোগ করে জিডি করার। পরদিন শনিবার ভোরে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর পুলিশও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে তৌহিদুজ্জামানের সন্ধান করতে থাকে। কিন্তু কোথাও কোনো হদিস মিলছিল না তার।

তৌহিদুজ্জামানের বড় ভাই শফিউল আযম বলেন, সোমবার ভোর ৬টায় তৌহিদুজ্জামানের স্ত্রী ইশরাত হক বাসার সামনে একটি অটোরিকশার শব্দ শুনতে পান। জানালা দিয়ে তিনি দেখেন অটোরিকশাটি চলে যাচ্ছে। গেটের পাশে কে একজন দাঁড়িয়ে আছে। তাৎক্ষণিক তিনি নিচে নেমে তৌহিদুজ্জামানকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সকালে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

তৌহিদুজ্জামান জানান, তিনি সিটি ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলার পর বনানী সৈনিক ক্লাব বাস স্টপেজে যাচ্ছিলেন। ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তার ওপারে নামতেই একজন তাকে একটি চিরকুট ধরে বলেন, স্যার আমি লেখাপড়া জানি না, এই ঠিকানাটা কোথায় হবে, তা আমাকে একটু বলে দিন। তার অনুরোধে চিরকুটটি হাতে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছিলেন তৌহিদুজ্জামান। অন্ধকার থাকায় তিনি তা পড়তে পারছিলেন না। একটু সরে গিয়ে চিরকুটটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করছিলেন, ঠিক তখনই পেছন থেকে তিন-চারজন তাকে ঝাপটে ধরে। তার মুখে রুমাল চেপে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। চেতনানাশক কিছু ব্যবহারে তাকে অচেতন করা হয়। তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে নেয় অপরাধচক্রের সদস্যরা। তারা তাকে তাদের গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়।

তিনি জানান, তিন দিন তাকে কোনো খাবার দেয়া হয়নি। শুধু পানি দেয়া হতো। নির্জন একটি ছোট রুমে তাকে রাখা হয়েছিল। ওই রুমে সিগারেট ও মাদকের গন্ধ পেতেন তিনি। সোমবার ভোরে তাকে উত্তরার আশপাশের কোনো এলাকায় রেখে যায় অপরাধ চক্রের সদস্যরা। এরপর তিনি একটি অটোরিকশা নিয়ে বাসায় ফেরেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, অপরাধচক্রের সদস্যরা প্রতিনিয়ত কৌশল পাল্টাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে কিছুদিন পর পরই নতুন নতুন কৌশলে অপরাধ সংঘটিত করে। একটি কৌশল নজরে আসতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোর তৎপরতা চালায়।

এতে অপরাধীচক্র আরেকটি নতুন কৌশল অবলম্বন করে অপরাধ শুরু করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত অপরাধচক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হচ্ছে। ফলে অপরাধীদের তৎপরতা আগের চেয়ে কমে এসেছে। নতুন কোনো কৌশলে অপরাধ সংঘটিত করা হলে তাও নজরদারি করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Bootstrap Image Preview