Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ব্যস্ত সময় পার করছেন বিরুলিয়ার ফুল চাষীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৩৫ AM
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৩৫ AM

bdmorning Image Preview


ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, আনন্দ কিংবা কষ্ট সব কিছু লুকিয়ে থাকে ফুলের মধ্যে। আর ফেব্রুয়ারি মানেই তো ফুলের মাস। এ মাসেই বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবস। আর এই দিবসগুলোকে সামনে রেখে ফুলের চাহিদা মেটাতে দিন-রাত বাগানে কাজ করছেন ফুলের রাজ্য খ্যাত বিরুলিয়ার ফুলচাষিরা।

দেশের গোলাপ ফুলের চাহিদার সিংহভাগ আসে সাভারের বিরুলিয়া থেকে। শুধু গোলাপই নয় এই এলাকাজুড়ে অনেক ধরনের ফুল চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই তিন দিবসে প্রায় তিন কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দিন রাত ফুল ও ফুলগাছের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন চাষিরা।

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিরুলিয়ার চাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য বাজারে ফুল সরবরাহ করে আসছেন। ইতোমধ্যে প্রতিদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন এই ফুলের রাজ্যে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাভার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫০০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, ভাগ্নিবাড়ি, সাদুল্যাপুর ও শ্যামপুর এলাকায়।

ফুল চাষী ফকির চাঁন বলেন, এর আগের বছর আমাদের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। ফুলে রোগের আক্রমণ হয়েছিল তাই ভালো ফলন হয় নাই। ফুল বেশি বিক্রিও করতে পারি নাই। তবে এবার কোনো ঝামেলা নাই ভালো ফলন হয়েছে। এবার মনে হয় ঘরে কিছু টাকা আসবে।

তিনি আরও বলেন, আমি এখানে মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, লাল গোলাপের চাষ করি। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল গোলাপের।

সাভার সিটি ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থী মাসুদ বলেন, বাবার সঙ্গে আমি মাঝে মাঝে কাজ করতে আসি ফুল বাগানে। এখন তো ফুলের মৌসুম এই সময়টি বেচা-কেনা হয় ভালো তাই বাবাকে সাহায্য করছি। ১১০ শতাংশ জায়গায় গোলাপের চাষ করেছেন বাবা। ১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারি (ভালোবাসা দিবস), ২১ ফেব্রুয়ারি, ১লা বৈশাখসহ বিশেষ বিশেষ দিনে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। দামও পাওয়া যায় ভালো।

তিনি আরও বলেন, যদি সরকার ফুল রফতানিতে ভূমিকা রাখতো তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজারগুলোতে। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন এই ফুল চাষ করে।

ফুলচাষিরা বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচা-কেনা হয় তার অনেকটাই পূরণ করে বিরুলিয়ার উৎপাদিত ফুল। আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত বরণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপক্ষে ৫-৭ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ফুল হাটে কোটি টাকার বেচা-কেনা হয়েছে।

কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় অসংখ্য দর্শনার্থী বিরুলিয়ার ফুল বাগান দেখতে আসেন। যে কারণে গত বছর ফুলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হয়েছিলে বলে দাবি করেন ফুল চাষিরা। রোগের আক্রমণের কারণ হিসেবে অতিরিক্ত দর্শনার্থীর চাপ ও তাদের অবাধ বিচরণকেই দায়ী করেছেন তারা।

স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বেশি ফুল বিক্রি হবে। বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ফুলের চাহিদা বেশি। কৃষকরাও ভালো দাম পাবেন। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ডার পাচ্ছি। তাদের চাহিদা মতো ফুল সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত আছি।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সাভারের বিরুলিয়ায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে।  এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ফুল চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। একর প্রতি ফুল উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন কৃষকরা ফুল চাষে ঝুকছেন। পহেলা ফাল্গুন থেকে শুরু করে সামনে তিনটি দিবস। এ জন্য এই গ্রামে এখন উৎসব বইছে। গত বছরের তুলনায় এবছর ফুলের ফলন ভালো হয়েছে। সতেজ ও টাটকা অবস্থায় ঢাকার বাজারে বিক্রি করায় দামও বেশি পাচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

Bootstrap Image Preview