Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রকৃতির দুয়ারে আজ বইছে ফাগুনের হাওয়া

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৩৪ AM
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:৩৪ AM

bdmorning Image Preview


প্রকৃতির দুয়ারে আজ বইছে ফাগুনের হাওয়া। ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়, বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণা হাওয়া। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন। 

ফাগুনের এই সময় পলাশ, শিমুল গাছে দেখা দেয় আগুন রঙের খেলা। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক, ব্যাকুল করে তুলবে অনেক বিরোহী অন্তর।

বাংলা প্রকৃতি এখন স্নিগ্ধময়ী, বাসন্তী বাস পরা। শীতের জরাগ্রস্থতা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋব্ধ হয়ে উঠছে রিক্ত বৃক্ষাদি। বেশুমার বনফুল হতে গুনগুন রবে মৌ-পরাগ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মধুমক্ষিকার দল। বিচিত্র সব মুকুলের মদির সুবাসে মানব মন মাত্রই অন্যরকম হিন্দোলিত হয়ে উঠছে। আদিগন্ত ফাগবেশ আর ব্যঞ্জনাময় উৎসব আমেজ মোহাবিষ্ট করে দারুণভাবে। এই জন্যই বসন্তের মাথায় স্মরণাতীতকাল ধরে ঋতুশ্রেষ্ঠর মুকুট।

এছাড়া গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়াসহ হাজারো নামের বর্ণালী ফুল তো বসন্তের সাজ আভরণ হিসেবেই বিবেচ্য। পৌষ-মাঘের জরা-ব্যাধির আসর এসে পড়ে পরের মাসেও। গরম অনুভূত তথা ঋতু বদলের বাতাস বইতে না বইতে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, পানিবসন্ত ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়। চিকিৎসকেরা এ সময়ে সর্বসাধারণকে সচেতন হয়ে চলার পরামর্শ দেন।

এই মাসটি কৃষির সাথে বেশ যোগসূত্র রয়েছে। ‘যদি বর্ষে ফাল্গুনে/ চীনা কাউন দ্বিগুণে', ‘ফাল্গুনে গুড় আদা বেল পিঠা/ খেতে বড় মিঠা' এমনি আরো অনেক কৃষিবিষয়ক খনার বচন রচিত হয়েছে বাংলা বর্ষের একাদশ মাসকে ঘিরে। কৃষক ফাল্গুনের দেয়ালে পিঠ রেখে তাকিয়ে থাকে চৈতালী ফসলের দিকে। এই ফাল্গুনেই দিগন্তজোড়া মাঠের বোরো ধান সোনালি রূপ পেতে থাকে। ফাল্গুনের স্বরূপ কবি-সাহিত্যিক, চিত্রকর, সঙ্গীতশিল্পী, সাংবাদিক সকলকেই মুগ্ধ করে। ফাল্গুন তথা বসন্তকাল এলে গ্রাম থেকে নগর-আবহমান বাংলার সর্বত্রই মেলার মওসুমও শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বৈশাখে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের মেলা' শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, গোটা বসন্তে মোট ৩২২টি গ্রামীণ মেলা বসে। 

এর মধ্যে ফাল্গুনে ৭৩টি ও চৈত্রে ২৪৯টি মেলা। এগুলোয় বসে দোলযাত্রা, চৈত্র তিথি, বারণী, চৈত্র সংক্রান্তি ইত্যাদি বিশেষ উপলক্ষে। মেলাকে ঘিরে প্রতিটি জনপদে উৎসবের জোয়ার বয়ে যায়। এসব মেলার মেয়াদকাল এক থেকে সাতদিন পর্যন্ত। লোক-কারুশিল্প পণ্য ছাড়াও এসব মেলায় বাহারী পসরা বসে। আধুনিক ব্যবহার্য ভোগপণ্যও বাদ যায় না। রাজধানীতে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ঢাকার বাইরেও বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

এর বাইরে ফাল্গুনের আরেক পরিচয় ভাষা শহীদদের মাস। ঊনিশশত বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আটই ফাল্গুন মাতৃভাষা ‘বাংলা' প্রতিষ্ঠার জন্য রফিক, সালাম, জববার প্রমুখ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। বারবার ফিরে আসে ফাল্গুন, আসে বসন্ত। শোক নয়, সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী মোকাবিলার দুর্বিনীত সাহস আর অপরিমেয় শক্তি নিয়ে। বীর সন্তানদের অমর গাঁথা নিয়ে। 

এই মাসে যে কোনো বিচারে এ এক অনন্য মাস, ঋতু। নৈসর্গিক ক্যানভাসে রক্তাক্ত বর্ণমালা যেন এঁকে দেয় অনির্বচনীয় সুন্দর এক আল্পনা। প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে উদার সড়কের বুকে। দেয়ালগাত্র থেকে লোহিত ধারার মোহনা শহীদ মিনার পর্যন্ত। আজ পহেলা ফাল্গুনে পাশ্চাত্য অনুকরণপ্রিয় তরুণ-তরুণীরা বেসামাল উন্মাদনায় মেতে উঠবে।

সময়ের পরিক্রমায় বসন্ত বরণ আজ বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব। আবাল-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী বসন্ত উন্মাদনায় আজকে মেতে উঠবে। শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্ত বরণে চলবে ধুম আয়োজন। শীত চলে যায় রিক্ত হস্তে, আর বসন্ত আসে ফুলের ডালা সাজিয়ে। বাসন্তী ফুলের পরশ আর সৌরভে কেটে যাবে শীতের জরা-জীর্ণতা।

বসন্তকে সামনে রেখে গ্রাম বাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা দেশীয় আয়োজনের সমারোহ থাকবে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙাবে বাসন্তি রঙেই। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও। তরুণীরা বাসন্তি রঙয়ের শাড়ি পরে প্রকৃতির কোলে নিজেকে সপে দিতে চাইবে। আর বসন্তের উদাস হাওয়ায় তরুণরা নিজেকে প্রকাশ করবে প্রেমে প্রেমে। বসন্ত যেন মানব মন আর প্রকৃতির রূপ প্রকাশের লীলা-খেলা।

ফালগুনে এই প্রথম দিন বসন্তের এই বর্ণিল সাজ…রঙের ছটা.. ইট-পাথরের এই নগরবাসীর জীবনে ছড়িয়ে থাক বছরজুড়ে..এমন প্রত্যাশা সকলের।

Bootstrap Image Preview