আইএস (ইসলামিক স্টেট) তৈরির পিছনে ছিল সৌদি যুবকরা। খেলাফতের ধারণাই তাদের এ পথে আসতে অনুপ্রাণিত করে। সিরিয়ায় সুন্নি বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তারা সন্ত্রাসবাদে জড়িয়েছিল। ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে দাঁড়ালে পাল্টা আইএসের পক্ষে যোগ দেয় সৌদি যুবকরা। এদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। এরা কেউ কেউ সেনাবাহিনী-পুলিশের সদস্য ছিল, এমনকী মসজিদের ইমাম পর্যন্ত যোগ দিয়েছিল এই সংগঠনে। সম্প্রতি ‘কিং ফয়সাল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ’ এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। খবর বর্তমান পত্রিকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের ফাঁস হয়ে যাওয়া নথি থেকে তারা তথ্য পেয়েছেন ৭৫৯ জন সৌদি নাগরিকের, যারা জঙ্গি সংগঠনটিতে নাম লিখিয়েছিল। এদের তথ্যের ভিত্তিতে ৪০ পৃষ্ঠার গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মূলত ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সিরিয়াতে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিল। সৌদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য, ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া নিষিদ্ধ করে ২০১৪ সালে আইন পাসের আগে দেশটির প্রায় আড়াই হাজার নাগরিক সিরিয়াতে গিয়েছিল। যেসব জঙ্গির তথ্য পাওয়া গেছে তাদের সংখ্যা এর প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০১১ সাল থেকে চলতে থাকা সিরিয়া সংকটের মধ্যে সৌদি নাগরিকরা দেখতে পেয়েছিল বড় মাত্রার সাম্প্রদায়িক বিভাজন। ২০১৩ সালের মে মাসে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ সিরিয়ার আসাদ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে জড়ায়। অন্যদিকে আসাদের বিরোধীরা মূলত সুন্নি। অন্যদিকে ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং ব্রিটেনের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে যারা সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তাদের অবস্থা ভিন্ন। ইসলামিক স্টেটের ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রায় তিন হাজার নথি পর্যালোচনা করে সংবাদসংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস দেখেছে ইউরোপ থেকে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া জঙ্গিরা মূলত বঞ্চিত শ্রেণি থেকে আসা। এদের ৭০ শতাংশের ইসলাম সংক্রান্ত জ্ঞানই আইএসের ফর্মে উল্লিখিত অপশনগুলোর মধ্যে একদম নিচের স্তরের। ফলে তাদের খুব সহজেই ইসলামের চরমপন্থি ব্যাখ্যায় উজ্জীবিত করা গেছে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের জঙ্গিদের মধ্যে অর্ধেকই বলেছে, তাদের ধর্মীয় জ্ঞান প্রাথমিক পর্যায়ের। আর বাকি অর্ধেকের ধর্মীয় জ্ঞান হয় মোটামুটি, না হয় বিশেষায়িত পর্যায়ের। গবেষকদের মতে, এটাই হওয়ার কথা। কারণ, সৌদি আরবের সব শিশুকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় বিষয়ে পড়ানো হয়। গবেষক আবদুল্লা বিন খালেদ আল সৌদ মন্তব্য করেছেন, নতুন প্রজন্মের সৌদি নাগরিকরা বঞ্চনার সূত্রে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়েছে এমন ধারণা সঠিক নয়।
সৌদি আরব থেকে সিরিয়ায় যাওয়া সংশ্লিষ্ট ৭৫৯ জনের মধ্যে ৩৪০ জনেরই হাইস্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা ছিল। ৬০ জনের ছিল ডিপ্লোমা ডিগ্রি। পাঁচজনের ছিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। তবে এদের ১৫ শতাংশ ছিল বেকার। সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের যারা বেকার ছিল না তাদের মধ্যে ৫০ জন দেশটির সামরিক বাহিনী, পুলিশ, ধর্মীয় পুলিশ বাহিনী ও মসজিদের ইমাম ছিল। অনেকে নিজেদের ধর্মপ্রচারক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল।