সোহাগ আলী নামের এক যুবক তার প্রেমিকা ঝালকাঠি সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী বেনজির জাহান মুক্তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মুক্তা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মোবাইল ফোনে তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্বেই ঢাকা থেকে চারশ' টাকা দিয়ে একটি চাকু কিনে আনে সোহাগ। ঘটনার দিন ৪ জানুয়ারি সেই চাকু দিয়েই গলায় আঘাত করে প্রেমিকা মুক্তাকে হত্যা করা সে। এরপর চাকুটি সুগন্ধা নদীতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় সোহাগ।
বেনজির জাহান মুক্তা নলছিটি উপজেলার বারইকরণ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর হাওলাদারের মেয়ে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার একমাত্র আসামি সোহাগ আলী তার প্রেমিকাকে হত্যার ঘটনাটি এভাবেই পুলিশের কাছে বর্ণনা করেছে।
বৃহস্পতিবার জেলার কলাপাড়া উপজেলার আনিপাড়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে ঝালকাঠি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গির আলম ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুক্তার সঙ্গে প্রায় দেড় বছর আগে নলছিটির নাঙ্গুলি গ্রামের আরমান নামে এক যুবকের মোবাইল ফোনে প্রেম হয়। আরমান ঢাকায় একটি পলিথিন কারখানার শ্রমিক এবং শিক্ষিত না হওয়ায় ৫-৬ মাস পর মুক্তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্যত্র বিয়ে করে সে। এরপর মুক্তা আরমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একই পলিথিন কারখানার আরেক শ্রমিক সোহাগ ছিল আরমানের বন্ধু। মুক্তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না চাওয়ায় আরমান তার ব্যবহূত সিমকার্ডটি বন্ধু সোহাগকে দিয়ে দেয়। এই নম্বর দিয়ে সে মুক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। ওই সিমকার্ডের সূত্র ধরে মুক্তা আরমানকে খোঁজার চেষ্টা করলে সোহাগের সঙ্গে তার কথোপকথন হয়।'
'একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক বছর ধরে চলছিল এ সম্পর্ক। মুক্তাকে প্রায়ই আর্থিক সহায়তা করত সোহাগ। এরই মধ্যে মুক্তার ইমোর পাসওয়ার্ড কৌশলে জেনে নেয় সোহাগ। ইমোর মাধ্যমে সোহাগ জানতে পারে মুক্তার সঙ্গে একাধিক ছেলের যোগাযোগ আছে। এ থেকেই মুক্তার ওপর সোহাগের আক্রোশের সূত্রপাত ঘটে।'
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গির আলম বলেন, সোহাগ ঝালকাঠি থেকে বরগুনার আমতলি হয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু চাঁদপুর থেকে সে আবারও কলাপাড়ায় ফিরে এলে তাকে নিলগঞ্জ ইউনিয়নের আনিপাড়া গ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কলেজছাত্রীকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের পরপরই ঝালকাঠি পুলিশের একটি টিম ঢাকায় যায়। সেখান থেকে ঘাতক সোহাগের এক বন্ধুসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সেখান থেকেই সোহাগের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে হত্যার ক্লু বের করে। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সোহাগ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মাস্তাপাড়া গ্রামের সোবাহান মিয়ার ছেলে।