Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কারাগারেই কয়েদিদের সংসার, খরচ চালান নিজেরাই!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩৯ PM
আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


কারাগার মানে অপরাধীদের শাস্তির জায়গা। যেটাকে আহ্লাদিত কিংবা সভ্য ভাষায় বলা হয়, সংশোধনাগার। কারাগার মানেই বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকা; দিনের পর দিন চার দেয়লের মাঝে আটকে থাকা। কারাগারে একজন অপরাধীর খাওয়া-চিকিৎসার দায়িত্ব থাকে কর্তৃপক্ষের। বাইরের আয়েশি জীবন ছেড়ে কষ্টে দিনাপাতি করতে হয় তাকে। পরে থাকতে হয় কারাগারের নির্ধারিত কয়েদির পোশাক।

কিন্তু যদি চাইলেই ইচ্ছে মতো প্রতিদিন কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়া যেতো, বিয়ে করে কারাগারেই সংসার পাতা যেতো, কিনে রাখা যেতো টিভি, ফ্রিজ, গাড়ির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য- তাহলে কেমন হতো? হ্যাঁ, অবাস্তব মনে হলেও এরকম কারাগার বাস্তবেও রয়েছে। আর সেটা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজস্থানে।

রাজস্থানের স্যানগানার নামের এ কারাগার থেকে প্রতিদিন সকাল হলেই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন কয়েদিরা। তাদের কেউ দিনমজুর, কেউ কারখানার শ্রমিক, গাড়িচালক আবার কেউ আছেন ইয়োগার শিক্ষক। এদের মধ্যে বিয়ে করে সংসার করছেন রামচন্দ এবং সাগনা। দুজনেই হত্যা মামলার আসামী।

রামচন্দ একটি স্কুলের বাস চালান আর সাগনা একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। প্রতিদিন সকাল হলেই কারাগার থেকে বেরিয়ে পড়েন তারা। এখানেই আছে তাদের লোহার ছাদের ঘর। টিভি, ফ্রিজ, আসবাবসহ সকল ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এদের মধ্যে রামচান্দ একা ছিলেন অন্যদিকে সাগনার পরিবার তাকে ত্যাগ করে। ফলে তাদের প্রতিবেশীরা তাদের বিয়ে দিয়ে দেন। যাতে করে তাদের আর একা থাকতে না হয়। আর বিয়ের পর থেকেই এই স্যানগানার কারাগারে তারা সংসার করছেন।

আসলে স্যানগানার হলো একটি উন্মুক্ত কারাগার। ভারতের পশ্চিঞ্চালীয় রাজ্য রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের একটি কারাগার। এই কারাগারের চারপাশে কোনো দেয়াল নেই, কয়েদিদের দেখার জন্য নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষীও। এমনকি কয়েদিদের বাইরে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়। বাস্তবে তাদের কাজের সন্ধানে শহরে যেতে বলা হয়। কারণ এই কারাগারে থাকতে দিলেও আসামীদের খাওয়া, পোশাক,  চিকিৎসা খরচ নিজেদের বহন করতে হয়। এই কারাগারে রামচন্দ ও সাগনার মতো এমন ৪৫০ জন বন্দি আছেন। যারা স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে শুধু স্যানগানা নন, রাজস্থানে এমন ৩০টি উন্মুক্ত কারাগার রয়েছে।

এসব কারাগারে যে কেউ চাইলে প্রবেশ করতে পারেন। এখানে যারা হত্যা মামলার আসামী, তারা এখানে সুখে রয়েছেন বলেই জানিয়েছেন। হত্যা মামলার আসামীদের মতে, এই কারাগার হলো একটি উন্মুক্ত ক্ষেত। সেজন্য তারা এখানে সুখেই আছে।

তবে এই উন্মুক্ত কারাগারে আসতে হলে মোট সাজার দুই-তৃতীয়াংশ সময় কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যেই কাটিয়ে আসতে হবে। অনেক সময় আবদ্ধ কারাগার থেকে এই উন্মুক্ত কারাগারে এসে অনেক আসামীই আর যেতে চান না। তাদের অনেকেই এখানে থেকেই স্থায়ী চাকরি করছেন, বিয়ে করে সংসার করছেন, ছেলে-মেয়েদের পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। ফলে সাজা শেষ হলেও তারা এখানেই থাকতে চান। যে কারণে সরকারকেই মাঝে মধ্যে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে অভিযান চালাতে হয়।

এই কারাগারে থাকা নারী বন্দিরা জানান, এখানে থাকা পুরুষদের বিয়ে করা সহজ। কারণ বাইরের লোকরা তাদেরকে বুঝতে চায় না। তাছাড়া একবার কারাভোগ করার পর বাইরের লোকজন তাদেরকে কাজে নিতে চায় না।

২০১৫ সালের শেষের দিকের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারতে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৬২৩ জন কারাবন্দির মধ্যে উন্মুক্ত কারাগারে আছেন ৩ হাজার ৭৮৯ জন। এদের মধ্যে রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রে আছে মোট ৪২টি উন্মুক্ত কারাগার। যেখানে মোট উন্মুক্ত বন্দিদের অর্ধেক অবস্থান করেন। এছাড়া দেশটির আরো ১৫ রাজ্যে এরকম ২১টি উন্মুক্ত কারাগার রয়েছে।

এ উন্মুক্ত কারাগারের অধিবাসী সাধারণের মতোই জীবনযাপন করেন। তারা মোটরসাইকেল, স্মার্টফোন, টিভি, ফ্রিজ কিনতে পারেন এবং তাদের কোনো কয়েদির পোশাক পরতে হয় না। প্রত্যেকের জন্য সরকার থেকে সারিবদ্ধ ছোট ছোট ঘর বরাদ্ধ থাকলেও তাদের খাবার, পানি কিছুই সরবরাহ করে না কারাকর্তৃপক্ষ। যে কারণে প্রতিদিন এখানকার বন্দিদের কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হয়।

তবে উন্মুক্ত কারাগার মানে কারাকর্তৃপক্ষ একেবারেই যে বন্দিদের খোঁজ রাখে না, সেটা কিন্তু নয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্দিদের হাজিরা নিশ্চিত করা হয়। প্রত্যেকের দেওয়া নম্বর অনুযায়ী ডাকা হয়। এই সময়টাতেই কেবল মনে হতে পারে যে এটা একটি কারাগার। প্রতিদিন মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ১ থেকে ৪৫০ পর্যন্ত ডাকা হয়। এ সময় মাঝে মাঝে ডাকা বন্ধ করে থেমে যাওয়া হয়। কেউ তার ঘরের ময়লা বাইরে ফেলে এসেছেন এমন কাউকে লক্ষ্য করে নিন্দা জানানো হয়।

মনে হতে পারে এ কারাগার থেকে একবার বেরিয়ে আর ফিরে না আসলেও তো হয়। কিন্তু সেটা আসলে সম্ভব নয়। কারণ এতে ওই কয়েদিই বরং বিপদে পড়বেন। কারণ তারা ফিরে না আসলে তাদেরকে ধরে আবার আবদ্ধ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। এর চেয়ে তারা মনে করেন সংসার পেতে উন্মুক্ত কারাগারে ভালোই আছেন তারা। তাই সকালে বের হলেও সন্ধ্যায় ঠিকই হাজিরায় উপস্থিত থাকেন এসব বন্দিরা। আর এভাবেই চলতে থাকে তাদের কারাবন্দি জীবন-সংসার। সূত্র: বিবিসি

Bootstrap Image Preview