নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের মামলায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভির (ইটিভি) চিফ রিপোর্টার (প্রধান প্রতিবেদক) এম এম সেকান্দারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত সিকদারের আদালতে এ মামলার শুনানি হয়।
এর আগে দুপুরে তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মবিন আহমেদ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এম এম সেকান্দারকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার ও তুহিন হাওলাদার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
শুনানিতে ওই সাংবাদিকের আইনজীবীরা বলেন, মামলার এজাহারের বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনার কোনো মিল নেই। এ আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। অভিযুক্ত জামিন পেলে পলাতক হবেন না।
অপরদিকে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) জাহিদুর রহমান জামিন নামঞ্জুর করে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, গতকাল রবিবার রাত আড়াইটার দিকে র্যাব-২-এর একটি দল এম এম সেকান্দারকে তার বনশ্রীর বাসা থেকে গ্রেফ তারর করে। এরপর আজ সকালে তাকে হাতিরঝিল থানায় সোপর্দ করা হয়।
মামলা করার আগে এই নারী সাংবাদিক ইটিভি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ২৮ জানুয়ারি চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এমএম সেকান্দার কর্তৃক নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানি শিরোনামে তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তাতে হয়ারনির পুরো ঘটনা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।
ওই নারীর অভিযোগ, তাকে দীর্ঘদিন ধরে সেকান্দার যৌন হয়রানি করে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার টেলিভিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলতে গেলেও তিনি তাদের কাছে পাত্তা পাননি।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রিপোর্টিং কোর্স করার সময় সেকান্দারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তার মাধ্যমেই ইটিভিতে চাকরি পান। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই সেকান্দার তাকে বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানি করেছেন। কোনও কারণ ছাড়াই তাকে অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে বসিয়ে রাখতেন। এরপর সেকান্দার তার নিজের গাড়িতে করে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতেও যৌন হয়রানি করতেন। এই কাজে চ্যানেলটির আরও কয়েকজন সেকান্দারকে সহায়তা করতো দাবি করেছেন তিনি।
ইটিভি'র বার্তা সম্পাদক দেবাশীষ রায় বলেন, আমাদের ভুক্তভোগী সহকর্মী লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আমরা বিষয়টি শুনছি। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের হয়রানি মানা যায় না। আমাদের নারী সহকর্মী সাহস করে প্রতিকার চেয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে আছি। আমরাও বিচার চাই।
এ বিষয়ে চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী শিকাদার বলেন, আমি অভিযোগটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই বিষয়টি তদন্ত করতে অফিসে একটি কমিটি করে দিয়েছি। নারী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ ঘটনাটি ভয়াবহ। আমরা সেটি আঁচ করতে পেরেছি। এটা ফৌজদারি অপরাধ। এরপর তিনি মামলা করেছেন। পাশাপাশি সেকান্দারকে শোকজ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওই নারী সহকর্মীকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছি। তার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করবো।
অভিযুক্ত সাংবাদিক সেকান্দার আটক থাকায় আইনি জটিলতার কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তার পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয় নাই।
উল্লেখ্য, সিকান্দার আটকের পরে তার আরেক নারী সহকর্মী ফেসবুকে মি টু হ্যাস ট্যাগ দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন এবং সেখানে তার সাথে সিকান্দার যে যৌন হয়রানিমূলক কর্মাকান্ড করেছেন সে ব্যাপারে নানা কথা বলার চেষ্টা করেছন।