Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাড়ি ফিরতে মরিয়া ‘আইএস বধূ’ লিওনোরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫০ AM
আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫০ AM

bdmorning Image Preview


ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দলে নাম লেখানোর উদ্দেশ্যে চার বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলেন লিওনোরা। জার্মানি থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন সিরিয়ায়। বছর ঊনিশের লেওনোরা এখন পূর্ব সিরিয়ার আইএসের শেষ দুর্গ বাঘোঝ থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেছেন। 

ভুল স্বীকার করে দুই সন্তানসহ বাড়ি ফিরতে চান লিওনোরা। শুধু লিওনোরাই নন, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আরও কয়েক হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে ফেলে পালাচ্ছে জঙ্গিরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ইরাক সীমান্তের পূর্ব সিরিয়ায় আইএস ঘাঁটিতে চূড়ান্ত লড়াই করছে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। প্রাণরক্ষার তাগিদে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা ছাড়ছেন বহু মানুষ। লিওনোরা তাদেরই একজন। পরনে কালো লম্বা বোরখা, মাথায় সাদা ফুল ফুল হিজাব। ঝরঝরে ইংরেজিতে নিজের কথা বলেছেন লিওনোরা। 
‘আমি যথেষ্ট গোয়ার ছিলাম। ইসলামে দীক্ষিত হই ১৫ বছর বয়সে। তার দু’মাস পরেই পালিয়ে সিরিয়া চলে আসি।’ সিরিয়ায় আসার তিনদিনের মধ্যে বিয়ে, এক জার্মানকে। ওই আইএস জঙ্গি মার্টিন লেমে’র তৃতীয় স্ত্রী লিওনোরা। আগের পক্ষের দুই স্ত্রীকে নিয়ে সে আগেই সিরিয়ায় চলে এসেছিল। তার আগেই সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছে আইএস। দলে দলে তাদের অনুগামীরা সেখানে জড়ো হচ্ছে। মার্টিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

বিয়ের পর প্রথমে জঙ্গিগোষ্ঠীর দখলে থাকা এলাকার অঘোষিত রাজধানী রাকায় থাকতেন লিওনোরা। মূলত গৃহবধূ হিসাবেই। রান্না করা, কাপড় কাচাই ছিল তার কাজ। প্রথমদিকে জীবন ছিল অনেক সহজ। কিন্তু এসডিএফ যত এগোতে লাগল, শুরু হল সমস্যা। প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে শহর হাতছাড়া হয়। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সপরিবার বাসস্থান পাল্টাতে হয় লিওনোরাদের। চাপ প্রচণ্ড বাড়ায় শেষ পর্যন্ত পরিবার ছেড়ে পিঠটান দেয় জঙ্গিরা। 

‌‌‌‌‌‌‘খাবার নেই, জল নেই। শত্রুপক্ষ এগিয়ে আসছে। আর মেয়েরা ফাঁকা শহরে বাচ্চাদের নিয়ে বসে আছে,’ বলেছেন লেওনোরা। সঙ্গে দু’সপ্তাহের ছোট বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টাও চলছে সমানতালে। আপাতত চার বর্গকিলোমিটার এলাকায় আটকে পড়েছে আইএস জঙ্গিরা। কুর্দ কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রয়েছেন এমন বহু জঙ্গির বিদেশি স্ত্রী। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে তাদের ফেরত নেওয়ার আবেদন করেও কোনও ফল হয়নি। সুযোগ বুঝে স্বামীর সঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে জঙ্গি পক্ষ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন লেওনোরা। সঙ্গে মার্টিনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীও। 

মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ মার্টিনকে আটক করে। নারী-শিশুদের ঠাঁই হয় ডিটেনশন সেন্টারে। তার দাবি, জঙ্গিদলে থাকলেও মূলত কম্পিউটার, মোবাইল সারানোর মতো টেকনিক্যাল কাজই করত মার্টিন। যদিও জার্মান সংবাদপত্রের অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদনে প্রকাশিত, বিদেশি জঙ্গিদের মধ্যে ২৮ বছরের মার্টিন ছিল যথেষ্ট প্রভাবশালী। একটি ব্রিটিশ নজরদারি সংস্থার হিসেব, ডিসেম্বরের গোড়া থেকে জঙ্গি কবলিত এলাকা থেকে অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ পালিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে ৩,২০০ জনকে জঙ্গি হিসাবে আটকও করা হয়েছে। 

শীঘ্রই ইরাক সীমান্তের ওপার থেকেও বহু শিশু-নারী ডিটেনশন সেন্টারে এসে আশ্রয় নেবে। কারণ, জঙ্গিরা সেখানেও কোণঠাসা।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় ‘খিলাফত’ এলাকায় চার বছর কাটিয়ে কী মনে হচ্ছে? ফ্যাকাশে মুখে উনিশের লেওনোরা বলছেন, ‌‘আমি জার্মানিতে আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। পুরনো জীবনে ফিরে যেতে চাই। এখন বুঝতে পারছি–ভুল, বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে।’ 

Bootstrap Image Preview