তিনটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের তিন শক্তিশালী নারী রাজনীতিক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য আগামী লোকসভা নির্বাচনে দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে উঠতে পারেন। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ভোটের লড়াইয়ে চমক হিসেবে মাঠে নামিয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে জানুয়ারিতে এক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে কংগ্রেসের হয়ে মঞ্চে ওঠেন প্রিয়াঙ্কা। যিনি মোদির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবেন বলেই ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের। বাকি দুই নারী হলেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সকে (এনডিএ) ক্ষমতা থেকে উত্খাত করতে ভিন্ন ভিন্ন দলের এই তিন নারী এক হয়েছেন। যদিও দলগুলোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি।
মোদিকে ভোটের লড়াইয়ে পরাজিত করতে দেশটির বিরোধী দলগুলো আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে। নিজেদের মধ্যে বিরোধ ভুলে একজোট হয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বলেন, ‘এনডিএর তুলনায় বিরোধী দলগুলোর নেতৃত্বে অনেক বেশি প্রভাবশালী নারী আছে। তারা সাধারণ ভোটারদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে সক্ষম, বিশেষ করে নারী ভোটারদের মধ্যে।’
গত বছর বিজেপি থেকে বেরিয়ে যান যশবন্ত। ওই বছরই ভারতের বিধান সভা নির্বাচনে দেশটির বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজ্যে হেরে যায় বিজেপি। যশবন্ত বলেন, ‘তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা, বিশেষ করে রাজনীতির প্রাণকেন্দ্রে থাকা তিনটি রাজ্যে হেরে যাওয়া পর।’
মূলধারার রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কার অভিষেক দেশটির গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কেউ কেউ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর মিল তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ বলছেন তিনি মে মাসের নির্বাচনে কংগ্রেসের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে যাচ্ছেন। তবে সমালোচনা করার লোকেরও অভাব ছিল না। প্রিয়াঙ্কা ট্রাম্প কার্ড হলে কংগ্রেস কেন এত দিন ‘জোকার’ নিয়ে খেলেছে, বিজেপি নেতাদের এমন ব্যঙ্গোক্তি করতেও শোনা গেছে। প্রিয়াঙ্কার তুলনায় অন্য দুই নারীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞাত অনেক বেশি। যদি বিরোধী জোট ভোটে জেতে, তাঁদেরকে কেউ কেউ সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীও বলছেন।
৬৩ বছরের মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) মূলত ভারতের নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘দলিত’ প্রতিনিধিত্ব করে। গত মাসে মায়াবতী তাঁর চির প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে দুইবার রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মমতা ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস পার্টি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজ দল অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (এআইটিসি) গঠন করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা গত মাসে রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় বিজেপিবিরোধী শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিলেন। ওই শোভাযাত্রায় সারা ভারত থেকে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। হাজার হাজার মানুষ ওই শোভাযাত্রায় যোগ দেয়।
তবে বিরোধী দলগুলো যত চেষ্টাই করুক, জনমত জরিপে মোদি এখনো ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। কন্যাশিশুদের উন্নয়নে তাদের শিক্ষিত করে তুলতে মোদির ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ আন্দোলন দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাঁর ২৬ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ছয়জন নারী আছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা মোদির আমলে নানা অর্জনের ওপর ভিত্তি করে ভোটের প্রচার চালাবেন। তাঁদের দাবি, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর মতো ইতিবাচক বিকল্প বিরোধী জোটের হাতে নেই।