নতুন দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেছিলেন এবং সে অনুযায়ি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে এবারের মতো শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
আজ শনিবার(২ জানুয়ারি) সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ না পাওয়া গেলেও পরীক্ষা চলাকালেই পরীক্ষাটির বহুনির্বাচনী প্রশ্ন এবং সৃজনশীল প্রশ্ন ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শেষে আসল প্রশ্নের সঙ্গে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মিল না পাওয়া গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।
ফেসবুকের ‘Ssc all board question out 2019-√100%’ নামের একটি পেজে আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। এ পোস্টের প্রশ্নগুলো একটু ঝাপসা থাকায় ইনবক্সে পরিষ্কার ছবি এবং বহুনির্বচনীর সমাধান চেয়ে কমেন্ট করছেন পরীক্ষার্থীর অভিভাবকেরা।
অন্যদিকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষাটির সৃজনশীল প্রশ্নের ৩ নং সেটের প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের মিল পাওয়া না গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।
আবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের ছবি পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেই ১১.২০ মিনিটে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে প্রশ্নের ছবি আপলোড করা হয়। সেই প্রশ্নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্ন মিলিয়ে দেখা গেছে, নৈর্ব্যক্তিক না মিললেও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে।
এই প্রশ্ন ‘ফাঁস’ করার উদাহরণ দেখিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য টাকাও চাওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, প্রশ্ন বাইরে আসার কোনও সুযোগ নেই। এখন এরকম হতে পারে কোনও পরীক্ষার্থী হয়তো ১ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে গেছে, সে ফেসবুকে ছবি দিয়েছে। কারণ, পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা পর যদি কেউ বেরিয়ে যেতে চায়, বের হতে দেওয়ার অনুমতি আছে। কিন্তু এভাবে প্রশ্ন আপলোড করে দিলে, এরপর থেকে তাহলে বলে দিতে হবে যে-পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা পর যারা বের হবে তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন রেখে দেওয়ার জন্য। তারা প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হতে পারবে না। এটা করা যেতে পারে।
এদিকে সারাদেশের কোথাও কেউ প্রশ্নফাঁসের অপচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আশকোনায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি।
পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আশা করছি সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে সব পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। আমরা শিক্ষক, অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী সবার কাছে পূর্ণ সহযোগিতা আশা করছি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করার জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র সচিব এবং পরীক্ষায় ডিউটির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা পরীক্ষার কেন্দ্রেই অবস্থান করবেন। জরুরি যোগাযোগের জন্য শুধু কেন্দ্র সচিব একটি মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন, তাও মোবাইলটিতে ক্যামেরা থাকা যাবে না। এছাড়া শিক্ষার্থী ও ডিউটি শিক্ষকরা কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবের না।
এমন সব কড়া নির্দেশনার পরও পরীক্ষা চলাকালে কীভাবে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে আসল তা জানতে চাইলে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় সাব কমিটি ও চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস অথবা কোনো ধরনের প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই।