রোহিঙ্গা গণহত্যায় খোয়ানো ভাবমূর্তি ফেরাতে এবং শ্লথ অর্থনীতির চাকা সচলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চি।
তার দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্মুক্ত বলে বিশ্ব বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তিনি। রয়টার্স জানায়, সোমবার রাজধানী নেপিদোতে তার প্রশাসনের করা প্রথম আনুষ্ঠানিক বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনে করেন সু চি। মিয়ানমারের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, আকর্ষণীয় ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান, ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজার ও তরুণ জনগোষ্ঠীর দিকে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি দিতে বলেন তিনি।
২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার সরকার যেসব সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে বক্তৃতায় সেগুলোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সম্মেলনে উপস্থিত ব্যবসায়ী, কূটনীতিক ও সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে এ নোবেলবিজয়ী নারী বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও সংস্কারের ধারাবাহিকতা নিয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি এখানে দাঁড়িয়ে পুনরায় আশ্বস্ত করছি। মিয়ানমারে আসুন, পরিস্থিতির অপার সম্ভাবনা অনুধাবন করুন, নিজের চোখেই দেখুন নতুন অর্থনীতির কম্পন।
রয়টার্স বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটির সরকারের নেয়া সংস্কার পরিকল্পনা সম্বন্ধে তেমন কিছু না জানা গেলেও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তন হয়েছে এ সম্মেলন তার ইঙ্গিত দিতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সোয়ে উইন সম্প্রতি মিয়ানমারের নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়ায় ব্যবসায়ীদের উৎসাহও বেড়েছে। তবে বিনিয়োগকারীরা বলছে, দেশটির সরকার এখনও বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান সহিংসতার অবসানের দিকেই বেশি মনোযোগী। অর্থনৈতিক সংস্কার ও ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনের দিকে তাদের দৃষ্টি নেই।
সম্মেলনে সু চি রোহিঙ্গা সংকট ও এর কারণে দেশটির বিনিয়োগের যে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। সামরিক জান্তার শাসনামলে মিয়ানমারের ওপর পশ্চিমাদের যেসব নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সেসব নিষেধাজ্ঞার কিছু ফিরে আসতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা।
রোহিঙ্গা সংকটের কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশটিতে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে দেরি করছেন বলে গত বছর এক প্রতিবেদনে বলেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও। একই কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। ইউরোপের সবচেয়ে বড় এ জোটে পণ্য রফতানিতে নেপিদো যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত, তা তুলে নেয়ার সম্ভাবনাও আছে।