Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাণীনগরে মন্দিরের জমি দখলের অভিযোগ

এফ এম আবু ইউসুফ, রাণীনগর প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:৩৬ PM
আপডেট: ২৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:৩৬ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


নওগাঁর রাণীনগরে মন্দিরের প্রায় ৩ একর ৭ শতাংশ ফসলী জমি জোর পূর্বক দখলের অভিযোগ উঠছে। মন্দিরের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর দখলীয় সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ইন্ডিয়ান হাই-কমিশনার বরাবরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশের উর্ধ্বতন পর্যায়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য রাণীনগর থানা পুলিশকে নির্দেশ দিলে এসআই মো: শহিদুল ইসলাম ইতিমধ্যেই তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ করেছেন বলে জানা গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কয়েক জন মন্দিরের সম্পত্তি জবর দখল করে চাষাবাদ করলেও উৎপাদিত ফসল থেকে মন্দিরের সেবাই কোন প্রকার হিস্যা না দেওয়ায় অর্থাভাবে মন্দিরের অনেক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করায় বিবাদীরা মন্দির কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকিও দিচ্ছে বলে ওই মন্দিরের সেবায়েতরা জানান।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা সদরের খট্টেশ্বর গ্রামে অবস্থিত শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দিরের নামে বর্তমানে প্রায় ৭ একর ৩৩ শতক আবাদী জমি রয়েছে। উপজেলার কাশিমপুরের জমিদার প্রসন্ন লাহিড়ী সেবায়েত সূত্রে তৎকালীন ওই মন্দিরের সেবায়েত কৈলাশ চন্দ্র প্রামানিকসহ ৭ জন সেবায়েতকে সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্বভার প্রদান করেন। যাহার সি.এস খতিয়ান নং-৫০৫ এবং সি.এস খতিয়ান নং-৫০৬, জেএল নং- ৬৯, মৌজা:- খট্টেশ্বর রাণীনগর, রকম: ধানী, পরিমাণ-৭ একর ৩৩ শতক। ১৯৬২ সালে এসএ খতিয়ান উপরোক্ত সেবায়েতদের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়।

পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে মাঠ জরিপে ওই মন্দিরের সেবায়েত সুধীর কুমার সরকারসহ ১৫ জন সেবায়েতের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হয় এবং ১৯৭২ সালে ওই ১৫ জন সেবায়েতের নামেই চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তুত হয়। যাহার আর.এস খতিয়ান নং-১০১৩, জেএল নং-৩১, মৌজা: খট্টেশ্বর রাণীনগর, রকম-ধানী, পরিমাণ-৭ একর ৩৩ শতক। মন্দিরের মোট সম্পত্তির মধ্যে প্রায় ৩ একর ৭ শতক জমি ওই গ্রামের মৃত ছকি মোল্লা’র ছেলে সফির উদ্দিন মোল্লা ১৬০ শতক, মৃত দশরত সরদারের ছেলে মো: বাছের আলী সরদার, তাছের আলী সরদার ও মৃত রহমান সরদারের ছেলে বাচ্চু সরদার ১১৫ শতক এবং মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো: সাফি প্রাং ৩২ শতক জমি জোর পূর্বক ভোগ দখল করছে। বিবাদীরা প্রভাবশালী হওয়ায় জমিতে উৎপাদিত ফসল থেকে মন্দিরের সেবাই কোন প্রকার হিস্যা না দেওয়ায় অর্থাভাবে মন্দিরের অনেক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

শ্রী শ্রী গোপিনাথ মন্দিরের সভাপতি শ্রী দিবাকর চন্দ্র সরকার বুদন জানান, লিখিত অভিযোগে উল্লেখিত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মন্দিরের হিস্যা প্রদান তো দূরের কথা তারা এখন ওই জমির মালিক হিসেবে দাবি করছে। সম্পত্তিগুলো জোর পূর্বক দখল করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরের অনেক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করায় আমাদেরকে দখলকারিরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। দখলকৃত সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান তিনি।

অপর দিকে বিবাদীদের দাবি, ১৯৬৩ সালে ওই মন্দিরের সেবায়েত সুধীর চন্দ্র শীল ও সূর্য্যকান্ত শীল মন্দিরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য তাদের অংশ আমাদের কাছে বিক্রয় করেছে। সেই থেকে আমরা ওই সম্পত্তিতে চাষাবাদ করে আসছি। এছাড়াও বিজ্ঞ আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেছিলাম এবং মামলার ডিক্রি আমরাই পেয়েছি। ১৯৭২ সালে ভুলক্রমে মন্দিরের সেবায়েতদের নামে জমিগুলো রেকর্ড হয়েছে। আমরা খুব তারাতারি বিজ্ঞ আদালতে রেকর্ড সংশোধনী মামলা দায়ের করবো এবং আদালতের মাধ্যমেই জমির যে সব জটিলতা আছে তা সমাধান করবো।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার স্বপন সাহা জানান, দেবত্তর সম্পত্তি দখল ব্যাপারে মন্দির কমিটি আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে এখনও ওই বিষয়টি দেখা হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এএসএম সিদ্দিকুর রহমান ও তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিদের্শ মোতাবেক বিষয়টি থানার পক্ষ থেকে তদন্ত কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ ওই জমিতে বিবাদীরা চাষাবাদ করে আসছে।

বিবাদীরা ১৯৬৩ সালে পৃথক পৃথক ভাবে ওই মন্দিরের দুই জন সেবায়েতের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছে মর্মে দলিল দাখিল করেছে। এছাড়াও বিজ্ঞ আদালতে তারা একটি বাটোয়ারা মামলা করেছিল সেই মামলায়ও বিবাদীরাই ডিক্রি পেয়েছে। তার একটি কপি আমাদের কাছে তারা জমা দিয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করে উর্ধতন কতৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারি কমিশনার (ভূমি) টুকটুক তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে আমার দফতরে এখনও কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে দেবত্তর সম্পত্তি কোন ক্রমেই সেবায়েতরা বিক্রয় করার ক্ষমতা রাখে না। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Bootstrap Image Preview