বিভিন্ন সমস্যা বোঝা নিয়ে চলছে উখিয়ার অজপাড়া গাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তির আবেদন করার ৪ বছরেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষক, কর্মচারীদের বিনা বেতন-ভাতায় পাঠদান করতে হচ্ছে। এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের মাধ্যমিক শিক্ষার একমাত্র অবলম্বণ এ প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এলাকাবাসী শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করছে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অভিভাবক মহল।
সরেজমিন এ উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলীয় জনপদ ডেইলপাড়া এলাকা ঘুরে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকার ৮০ শতাংশ পরিবার হতদরিদ্র হওয়ার সুবাদে ইতিপূর্বে শত শত শিক্ষার্থী পঞ্চশ শ্রেণি থেকে ঝড়ে পড়েছে। এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসারিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষার।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব জালাল আহমদ চৌধুরী জানান, অত্র এলাকার ৬ কিলোমিটার চার পার্শ্বে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমান মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আহমদ শামীম আল রাজি ২০০৭ সনে ডেইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ভবনে ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি উদ্বোধন করেন। ২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বশর বিভিন্ন শ্রেণির ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করেন।
সাবেক ইউপি সদস্য ফরিদ আলম জানান, এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার তিনটি ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। এ বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নে শিক্ষানুরাগী দাতা সংস্থাদের এগিয়ে আসার উচিত।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সহ সভাপতি আব্দুল আলম ফকির জানান, সরকারি বেসরকারি বা কোন দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি কোন অনুদান পাননি। যার ফলে বহুমুখী সমস্যা নিয়ে বিদ্যালয়ের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিচালনা কমিটির ব্যক্তিগত অনুদানের উপর নির্ভর করে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ গফুর আলম জানান, বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। ২০১৪ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতাভাগ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার উন্নত পরিবেশ তারা সৃষ্টি করতে পারছেন না।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন সংকট, আসবাবপত্রের অভাব, পানীয় জলের সমস্যা, নড়বড়ে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম, অপ্রতুল টয়লেট ব্যবস্থা ও শিক্ষা সরঞ্জামের অভাবে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের পোহাতে হচ্ছে দূর্ভোগ।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রায়হানুল ইসলাম মিয়া জানান, তারা বিদ্যালয়টি সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছেন। তারা বলেন, অজ পাড়া গাঁয়ে গড়ে ওঠা ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়টির পড়ালেখার গুনগতমান দৃশ্যমান থাকলেও বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তির জন্য তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন।
এ ব্যাপারে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আহমদ শামীম আল রাজির সাথে মুঠোফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য তিনি বরাদ্ধ চেয়ে আবেদন করেছেন। তাছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি তার প্রতিষ্ঠিত ডেইলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করার আশ্বস্ত করেন।