Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় পপি বাগানের সন্ধান, ধ্বংস করল সেনাবাহিনী

সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান প্রতিনিধি-
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:৫০ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:০৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন বান্দরবানের থানছি ও রুমা এলাকায় নিষিদ্ধ পপি বাগানের সন্ধান পেয়েছে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। এরপর নিষিদ্ধ মাদক আফিম বাগান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারী) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লে: কর্ণেল মো: হাবিবুল হাসান পিএসসি’র নির্দেশে তিন্দু ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার মো: মোতালেব’র নেতৃত্বে দশ সদস্যের একটি দল থানছি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের মুরুক্ষ্যং ঝিরি এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করেন।

এসময় প্রায় ৫’শ বর্গফুটের একটি নিষিদ্ধ পপি (আফিম) বাগান ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযানের খবর পেয়ে পপি বাগান চাষীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বিজিবির সদস্যরা।

শুক্রবারও সেখানে আরো পপি বাগানের খোঁজে অভিযান চালিয়েছে বিজিবি।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রিজার্ভ ফরেষ্টের অত্যন্ত দূর্গম ও জনমানবহীন নিরবিচ্ছিন্ন পাহাড়ী এলাকায় পাহাড়ীরা প্রতিবছর থানছির দূর্গম এলাকাগুলোতে নিষিদ্ধ পপি (আফিম) চাষ করে আসছে। প্রতিবছরই বিজিবি সদস্যরা উক্ত দুর্গম পাহাড়ী এলাকাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ পপি (আফিম) বাগান ধ্বংস করে আসলেও দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় প্রতিবারেই অভিযানের সময় পালিয়ে যেতে সক্ষম হওয়ার কারণে এ চাষ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এলাকার তিন্দু মৌজার হেডম্যান প্রাইংচং খুমি জানান, পাহাড়ি ঝিড়ির কাছে কে বা কারা পপি চাষ করেছে তা তারা জানেন না। বিশেষ করে, লোকজনের যাতায়াত নেই এমন জায়গায় পপি চাষ করা হয়। পরে এগুলো থেকে রস সংগ্রহ করে আগুনে জাল দিয়ে পপি উৎপাদন করা হয়। সীমান্ত পথে পাচারের পাশাপাশি স্থানীয় বয়স্করাও শরীরে শক্তি জোগাতে পপি খেয়ে থাকে। পপি চাষ লাভজনক হওয়ায় এখনো অনেকেই পাহাড়ের দুর্গম জায়গায় চাষ করে থাকে।

বলিপাড়ার ৩৮ বিজিবির জোনের অধিনায়ক লে: কর্ণেল মো: হাবিবুল হাসান পিএসসি’ জানান, বিজিবি সবসময়ে পপি (আফিম)সহ মাদক জাতীয় চাষাবাদে নিরুৎসাহিত করে আসছে।

তিনি জানান, কোন ভাবেই মাদকের বিরুদ্ধে ছাড় দেবনা। কোথাও পপি চাষের সন্ধান পেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

তিনি আরো জানান, চলতি বছর থানছির বড় মাদক এলাকার উপরে সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকাগুলোতে বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ পপি (আফিম) বাগান ধ্বংস করা হয়েছে। পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক চাষ এবং চোরাচালান বন্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান জোরদার করেছে বলেও ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের কারণে পপি চাষ আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে এসেছে।

প্রসঙ্গত, পপির সবচেয়ে বড় ক্রেতা মিয়ানমার। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বান্দরবানের সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্টের দুর্গম ও জনমানবহীন পাহাড়ি এলাকায় কিছু বিপদগামী পাহাড়ি প্রতিবছর লাভজনক নিষিদ্ধ পপি চাষ করে আসছে। উৎপাদিত পপি পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারে পাচার করা হয়ে থাকে। প্রতিবছরই মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান বেড়ে যাওয়ায় এখন পপি চাষ কমে এসেছে।

উল্লেখ্য, পপি,পারস্যে যাকে বলা হয় ভালোবাসার ফুল। উর্দুতে গুল-ই-লালাহ বা শহীদের প্রতীক। পপি গাছ এর আদি নিবাস ইউরোপ। ফুলের রং সাদা, লাল, গোলাপি, হলুদ। ফুলের পাপড়িগুলো রেশমের মতো কোমল।

পপি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Papaver somniferum। এই নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক পুরাণের ঘুমের দেবতা 'সোমনাস'-এর নামানুসারে। কারণ পপি ক্ষেতে বয়ে যাওয়া বাতাসও প্রাণীদের ঘুম পাড়িয়ে দিতে সক্ষম!

ভয়ঙ্কর সুন্দরের প্রতীক পপি; একই সঙ্গে বিখ্যাত এবং কুখ্যাত একটি গাছ। সুন্দর ফুলের পাশাপাশি এ গাছের রয়েছে নানা ঔষধি গুনাগুনও। আবার এ গাছের ফল থেকেই তৈরি হয় সর্বনাশা মাদক আফিম, হিরোইন, মরফিন।

Bootstrap Image Preview