Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের নিয়েও জটিলতায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:০৩ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:০৩ PM

bdmorning Image Preview


৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় একাদশ নির্বাচনে আসনভিত্তিক অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের নিয়েও জটিলতায় পড়েছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। নির্বাচন পর্যালোচনায় ফ্রন্টের প্র্রথম বৈঠকেই ট্রাইব্যুনালে মামলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে প্রার্থীদের সাথে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সকলে এক মত হলে প্রার্থীদের এ জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথাও বলা হয়। সে অনুযায়ী প্রার্থীদের কাছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার-হয়রানি, হতাহত ও নির্বাচনী অনিয়মের সার্বিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছিল বিএনপি।

প্রার্থীদের বেশিরভাগই ইতিমধ্যে লিখিত প্রতিবেদনের পাশাপাশি ছবি, অডিও-ভিডিও ফুটেজসহ সিডি বা পেনড্রাইভও জমা দিয়েছেন। তবে ট্রাইব্যুনালে মামলার জন্য প্রয়োজন কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সার্টিফাইড কপি। যা  রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেই এ কপি সরবরাহ করা হয় প্রার্থীদের।

কিন্তু আবেদন এবং বারবার তাগাদা দিয়েও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সার্টিফাইড কপি পাননি প্রার্থীদের অনেকে। প্রার্থীদের কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করলেও তাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ার। আর কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সার্টিফাইড কপি না পাওয়ায় মামলা দায়ের করতে পারছেন না ধানের শীষের প্রার্থীরা।

তবে কেউ কেউ ইতিমধ্যে সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেও এখন পর্যন্ত মামলা করেন নি। ফলে এখন পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলা দায়ের হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপি নেতারা নির্বাচনী অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আসনভিত্তিক মামলা দায়েরের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছেন। 

নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না। তাই বৃহত্তর পরিসরে নয় সব প্রার্থী একযোগে মামলা করার বদলে রেকর্ড রাখার স্বার্থে অতিমাত্রায় অনিয়ম হওয়া কয়েকটি আসনে মামলার পরামর্শ এসেছে দলটির নীতিনির্ধারক ফোরামে। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের শরিক এলডিপি দলগতভাবে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, আগামী ৩০শে জানুয়ারির মধ্যে ফলাফল প্রকাশ না করলে তাদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন। সেই সঙ্গে কোর্টের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে রেকর্ড কল করানো হবে। এদিকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের বিষয়টি আটকে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন আরেক জটিলতায় পড়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। নির্বাচনের পর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে গিয়েও তারা তা দাখিল করতে পারছেন না।

ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আসনভিত্তিক মামলা করার জন্য আমরা কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। আমরা নির্বাচন কমিশনের আসনভিত্তিক ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি।

সেটা সময়মতো না পেলে যে তথ্য আছে সেটার ভিত্তিতে মামলা করা হবে। কীভাবে মামলা করা হবে সেটার জন্য আইনজীবীদের ওপর ভরসা করছি। তারা যে পরামর্শ দেবেন সেভাবেই আমরা মামলা করবো। মন্টু বলেন, নির্বাচনের অনিয়মের অন্যান্য সকল তথ্য প্রস্তুত আছে। কাগজপত্র সব আইনজীবীর কাছে রয়েছে। যেকোনো দিন মামলা করা হতে পারে।

হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে গণফোরামের প্রার্থী অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যেই আমরা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবো। ইতিমধ্যে কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। তবে মামলা করার জন্য আসনভিত্তিক ফলাফল প্রয়োজন। আমরা জানতে পেরেছি নির্বাচন কমিশন ৩০শে জানুয়ারির মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবে না।

এটা তারা না দিলে আমরা মামলা করার সময় বলবো রিপোর্ট পেলে জমা দেয়া হবে। রেজা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশে সবকিছুই সম্ভব। নির্বাচনে এত বেশি অনিয়ম হয়েছে যে, এক মাসেও তার হিসাব মিলাতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন যদি ৩০ তারিখের মধ্যে রিপোর্ট না দেয় তাহলে প্রমাণিত হবে সরকার মামলাকে ভয় পাচ্ছে। আমরা যেন মামলা করতে না পারি সেই জন্য রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে ২০দলীয় জোটে শরিক দল এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা দলগতভাবে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতদিন ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে আদালত, কারাগার ও হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে ছিলাম। এখন ট্রাইব্যুনালে মামলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিশেষ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সার্টিফাইড কপি যোগাড়ের তৎপরতা চলছে। 

মৌলভীবাজার-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ও জেলা বিএনপি সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন, অনেক তৎপরতার পর (২৩শে জানুয়ারি) ডিসি অফিস থেকে আমি কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সার্টিফাইড কপি পেয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে কপিটি দিয়েছে ৩১শে ডিসেম্বরের ব্যাকডেটে। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত আছে আমাদের দলের। সে অনুযায়ী দুয়েকদিনের মধ্যেই আমি মামলা দায়ের করবো।

তবে ঢাকা-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন জানান, দলের নির্দেশনা অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর থেকে মামলা-হামলা-নির্বাচনী অনিয়মের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে মামলার জন্য এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। ফলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফলাফলের সার্টিফাইট কপিও চাইনি। তবে অন্য একটি জটিলতায় পড়েছি। নির্বাচনের পর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নিয়ে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করলেও তারা হিসাব গ্রহণ তাদের দায়িত্ব নয় বলে ফেরত দিয়েছে। এখন কোথায় হিসাবটি জমা দিতে হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও দিচ্ছে না ইসি। কিন্তু যথাসময়ে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করলে মামলার আশঙ্কাও রয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, মামলার ব্যাপারে কিছু ভিন্নমতও এসেছে দলীয় ফোরামে। বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের বরাতে তারা বলছেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা গেলেও ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে তারা সন্দিহান। নেতারা জানান, অনিশ্চয়তা সবখানেই। তারা যেহেতু ইতিমধ্যে মামলা করার জন্য বেশিরভাগ দালিলিক প্রমাণ হাতে পেয়েছেন, প্রার্থীদের নিজস্ব প্রমাণ ছাড়াও দেশী ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নির্বাচনে অনিয়মের অনেক প্রমাণ প্রকাশ-প্রচার হয়েছে; তাই মামলা দায়ের করা উচিত। 

এমন পরিস্থিতিতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলেও এ ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নিজেদের মধ্যে আরো বোঝাপড়া করছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবার সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে অনিয়মের সব তথ্য জাতিকে জানাতে তথ্যপ্রমাণসহ একটি বই ও অডিও-ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে একটি সিডি প্রকাশ করবে বিএনপি। 

Bootstrap Image Preview