২০১১ সালে ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরে হাসপাতালে গিয়ে প্রসবের হার ছিল ৭৪ শতাংশ। বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে ৯৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে সেখানকার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, কেন কিছু এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার কম ছিল, শুরুতে তার পর্যালোচনা করা হয়। কারণ খোঁজা হয়। পরবর্তী সময়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরপরই ওই হার বাড়তে শুরু করে।
তার মতে, এখন মাতৃযানের সুবিধে রয়েছে। এর ফলে হাসপাতালে এসে প্রসব করানোর প্রবণতা বেড়েছে।
হাসপাতালে এসে সন্তানের জন্ম দিন, রাজ্যের এই বার্তা আজকের নয়, অনেক আগের। রাজ্যে সরকার গঠনের শুরু থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বৃদ্ধিতে জোর দিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তিনি ক্ষমতায় আসার পর এই হার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। তবে জেলার সব এলাকা সমানভাবে এগিয়ে ছিল না। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০১১-১২ সালে জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ছিল ৭৪ শতাংশ।
একশ জন সদ্যোজাতের মধ্যে ৭৪ জনের জন্ম হত হাসপাতালে। বাকি ২৬ জনের জন্ম হত বাড়িতেই। ওই সূত্র বলছে, ২০১১-১২ সালে জেলায় ৭৩ হাজার একশ ৩৩ জন শিশুর জন্ম হয়। এরমধ্যে হাসপাতালে জন্ম হয় ৫৪ হাজার চারশ ১১ জনের।
পরের বছর এই হার খুব একটা বাড়েনি। সে বছর ৭৭ শতাংশ ছিল। তার পরের বছর ছিল ৮০ শতাংশ।
হাসপাতালে কিছু মানুষের না আসার কারণ অনুসন্ধান করেন জেলার স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা। তারা দেখেন, এলাকার একাংশ স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে আশাকর্মী প্রসূতিদের বাড়িতে যান না। অথচ, প্রসূতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে শুরু করে সচেতনতার প্রসার-গ্রামাঞ্চলে এই কাজটা আশা কর্মীদেরই করার কথা।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম পর্যন্ত গ্রামের মায়েদের ভার কার্যত তাদের হাতেই থাকার কথা। কিন্তু বহু কর্মী নানা কারণে বাড়ি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয়ায় প্রসূতিদের হাসপাতালে আসতে উদ্বুদ্ধ করার কেউ থাকছেন না।
জেলার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কথায়, দেখা যায়, একাংশ গ্রামবাসীর এ সম্বন্ধে অজ্ঞতাও এর জন্য দায়ী। তারা হাসপাতালে আসতে চান না।
একাংশ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেহাল ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশ অনেকের ভালো লাগত না। এরপর স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মীদের সতর্ক করা হয়। কাজে ‘গাফিলতি’ মেনে নেয়া হবে না বলে জানানো হয়।
প্রত্যন্ত গ্রামেও গ্রামবাসীদের সচেতন করা শুরু হয়। গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর মানোন্নয়ন করার কাজও শুরু হয়। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্মকর্তার কথায়, একজন মা যদি হাসপাতালে এসে প্রসব করে নিশ্চিন্ত হন তাহলেই তিনি তার চারপাশের অন্যদের হাসপাতালে গিয়ে প্রসবের কথা বলবেন।
গত ৭ মাসে জেলায় ৩১ হাজার সাতশ ৪৮ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে জন্ম হয়েছে ৩১ হাজার চারশ ১৯ জনের।