Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চিকিৎসা, শিক্ষা ও সেবাতেও পুরুষদের পেছনে ফেলছেন নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারী ২০১৯, ০২:৩৪ PM
আপডেট: ২০ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:০৬ PM

bdmorning Image Preview


দিন বদলের সাথে পাল্লা দিয়ে চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবার ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা পুরুষকে ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ২২০ জনের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১৩৬ জন। আবার ১০ বছরে পুরুষের তুলনায় এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনকারী নারীর সংখ্যাও প্রায় ৩ হাজার বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে এটাই চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসা পেশার চিত্র। এ বছর মেডিকেল কলেজগুলোতে ১০ হাজার ২২৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশ ছাত্রী, ছাত্র ৪০ শতাংশ।

২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও এমবিবিএস পাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, মেডিকেলে এখন ছাত্রী বেশি ভর্তি হচ্ছে। ছাত্রীরা পাসও করছেন বেশি। এমবিবিএস পাসের ক্ষেত্রে ছাত্রীরা শুধু সংখ্যায় বেশি তাই না, শীর্ষ স্থানগুলোও তাঁরা দখল করছেন।

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা শীর্ষ ১০ জন শিক্ষার্থীর ৮ জন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ওই আটজনের সাতজনই ছাত্রী। এই ধারা বেশ কয়েক বছর চলছে।

ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবির) গবেষণা বলছে, এমবিবিএস পাস করা ৯১ শতাংশ নারী চিকিৎসক স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী। মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষকস্বল্পতা থাকলেও নারীদের তাতে আগ্রহ নেই। গ্রামে এখনই চিকিৎসক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। নারী চিকিৎসক বাড়লে সেই সমস্যা আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীরা বলেছেন, তাঁরা শহুরে পরিবেশে থাকতে পছন্দ করেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। সরকার মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যসেবার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারী চিকিৎসকদের সংখ্যাধিক্য খারাপ কিছু নয়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১০ বছরে (২০০৭-১৬ সাল) মেডিকেল কলেজগুলো থেকে মোট ৩৯ হাজার ২৮৫ জন বাংলাদেশি এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে বের হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছাত্র ২১ হাজার ১২৩ জন এবং ছাত্রী ১৮ হাজার ১৬২ জন। অর্থাৎ এই সময়ে পুরুষের চেয়ে ২ হাজার ৯৬১ জন বেশি নারী চিকিৎসক ডিগ্রি নিয়েছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, আগামী বছরগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৬-২৭ সাল নাগাদ প্রতিবছর পুরুষ চিকিৎসকের দ্বিগুণ নারী চিকিৎসক ডিগ্রি নেবেন। কেন ছাত্রী বেশি ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ  বলেন, মেধার জোরেই মেয়েরা সংখ্যায় বেশি ভর্তি হচ্ছে, বেশি পাস করছে।

তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার ভিত্তিতে জাতীয় মেধাক্রম তৈরি হচ্ছে। এতে ছাত্রীদের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজকে দেশের সেরা মেডিকেল কলেজ বিবেচনা করা হয়। মেধাতালিকার শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়া ছাত্রের সংখ্যা ছাত্রীদের প্রায় অর্ধেক এখন।

গবেষণার তথ্য ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) নিবন্ধিত ৩৪ হাজার ৬৯৭ জন চিকিৎসকের তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা দেখেছেন, এঁদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ পুরুষ চিকিৎসক ও ৫২ শতাংশ নারী চিকিৎসক। পুরুষ চিকিৎসকদের ৮৭ শতাংশের বিশেষ দক্ষতা মেডিসিন ও সার্জারি বিষয়ে।

আর নারী চিকিৎসকদের ৯৬ শতাংশের বিশেষ দক্ষতা স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ বিষয়ে। ২১ পৃষ্ঠার গবেষণা প্রবন্ধ ১১ জানুয়ারি অনলাইন মেডিকেল জার্নাল প্লজ ওয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণায় এমবিবিএস শেষ বর্ষের সরকারি মেডিকেলের ২০৭ জন ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ১০৭ জন ছাত্রীর ওপর জরিপ করা হয়।

জরিপে অংশ নেওয়া ছাত্রীদের ৯৩ শতাংশ ছিলেন শহরের। ছাত্রীদের ৯৪ শতাংশ বলেছিলেন, সামাজিক মর্যাদার কারণে তাঁরা চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁদের ৪২ শতাংশ এ-ও বলেন, এই পেশা বেছে নেওয়ার পেছনে বাবা-মায়ের চাপ ছিল। ১৭ শতাংশ বলেছিলেন, বিয়ের বাজারে এই পেশার দাম আছে।

Bootstrap Image Preview