Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মন্ত্রীদের ফুল দিলেন বিএনপি নেতারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৪৭ PM
আপডেট: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৪৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


একাদশ জাতীয় সংসদের নতুন মেয়াদে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে মঙ্গলবার সিলেটে এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ। মন্ত্রী হয়ে সিলেট ফেরার পর রাতেই ড. মোমেনের বাসায় শুভেচ্ছার ফুল নিয়ে হাজির গেল নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী।

এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হতে না হতেই বুধবার সকালে ড. মোমেনের বাসায় এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপির প্রার্থী হয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তারা শুধু ফুলই দিলেন না, কথাও বললেন দীর্ঘ সময়।

এদিকে তাদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেশ ধরে এবার বুধবার গোয়াইনঘাটে নিজ এলাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানালেন- বিএনপির হয়ে নির্বাচিত গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আব্দুল হাকিম।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে 'নাস্তানাবুদ' পরাজয়ের পর সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যখন ক্ষোভ আর হতাশা তখন সেই হতাশার আগুনে যেন ঘি ঢাললেন সিলেটের ৩ বিএনপি নেতা।

এ অবস্থায় তিনটি শুভেচ্ছা বিনিময় নিয়ে সিলেট বিএনপির ভেতরে তৈরি হয়েছে চরম ক্ষোভ। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপির অনেকেই তাদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করছেন। এমনকি করছেন নানা হিসেব নিকেশও। যদিও তিনজনই এটার সাথে রাজনীতি মেলাতে নারাজ। তাদের কেউ এটাকে বলছেন কর্তব্যবোধ এবং কেউ বলছেন পারিবারিক সম্পর্কের কথা।

বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আব্দুল হাকিম বলেন- 'আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আর বুধবার ছিল উপজেলা প্রশাসনের একটা সভা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ। ওই সভায় মন্ত্রী মহোদয়কে স্বাগত জানিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এটা শুধু দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে। এর বাইরে ব্যাক্তিগতভাবে উনার সাথে আরো কোনো কথা হয়নি। এটা নিয়ে রাজনীতি করা কিংবা দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।' এদিকে বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ধোপাদিঘীর পূর্বপাড়স্থ ড. মোমেনের বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিটি মেয়রের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়- এসময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ায় তিনি ড. এ কে আবদুল মোমেনকে অভিনন্দন জানান। এছাড়া সিটি মেয়র বিগত সময়ে নগর উন্নয়নে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সহযোগিতার কথা তুলে ধরে তিনি আগামী দিনেও সিলেট নগরীর উন্নয়ন নিয়ে ড. মোমেনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

তবে এ প্রতিবেদন তৈরিকালে মেয়র আরিফ জরুরী সভায় থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সচিব মো. বদরুল হক, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, কর্মকর্তা হানিফুর রহমানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমদ চৌধুরী।

ড. একে আব্দুল মোমেনের ঘনিষ্টজনদের পক্ষ থেকেও দেখা করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও কি কারণে দেখা হয়েছে বা কি কথা হয়েছে সে ব্যপারে কিছু জানাতে পারেননি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকে শফি চৌধুরীর দেখা করার বিষয়টিকে ইনাম চৌধুরীর ঘটনার সাথে মেলাতে চাইছেন আবার অনেকে নিচ্ছেন স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতেই মোমেনকে ফুল দিয়ে অভিনন্দনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শফি আহমদ চৌধুরীও কি ইনাম আহমদ চৌধুরীর পথ অনুসরণ করছেন এমন প্রশ্ন আসে মানুষের মুখে মুখে। তাছাড়া এমন ঘটনায় আওয়ামী লীগের অধীনে হওয়া নির্বাচনকে মেনে নেয়ার সামিল বলছেন অনেকে।

বিষয়টি নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন- ‘ঘটনাটি আমিও জেনেছি। এরপর শফি সাহেবের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে এবং সকালে দেখাও হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন যে- মোমেন সাহেবের ভাইয়ের সাথে তাঁর ভাল সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের কারণেই দেখা করতে গিয়েছেন। আর কি কথা হলো তা বলেননি।’

এতে বিএনপির সাংগঠনিক ক্ষতি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আলী আহমদ বলেন- ‘মূলত সৌজন্যতাবশত সাক্ষাৎ। এখন বিষয়টিকে কে কিভাবে নেবে তা বুঝতে পারছি না।’ দলীয় নেতাকর্মীদের উপর ‘হয়রানিমূলক’ মামলা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘দেখা হয়েছে যেহেতু, বলতেও পারেন। তবে পুরো বিষয়টি জানি না।’

বিষয়টা নিয়ে যখন পুরো সিলেটে তোলপাড় তখন গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ঘটনার বিষয়ে পরিস্কার করেছেন শফি আহমদ চৌধুরী। বিবৃতিতে তিনি জানান, সৌজন্য সাক্ষাৎ কিংবা রাজনৈতিক কোন ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে আমি মোমেনের বাসায় যাইনি। সিলেটের একজন মন্ত্রী হিসেবে আমি তার কাছে গিয়েছিলাম যাতে নির্বাচনের জের ধরে আমার যেসব নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং আমার যেসব নেতাকর্মী এখনো কারাগারে বন্দী আছে তাদের যেনো ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব অনুরোধ করতেই আমি তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।'

আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘মোমেনের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে সত্য। মোমেনের সাথে দেখা করেছি বলেই যে আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি-এরকম প্রোপাগান্ডা সত্য নয়। আমার রক্তে বিএনপি। বিএনপি ছাড়া অন্য কোন দলের সাথে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা চিন্তা করতে পারি না।’

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে সিলেট-১ আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাওয়া ইনাম আহমদ চৌধুরীও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আব্দুল মুহিত ও ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে চূড়ান্ত মনোনয়ন না পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

আর এবার শফি চৌধুরী কর্তৃক ড. মোমেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পর আবার সেই আলোচনাই উঠে আসছে। মানুষের মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে- তবে কি ইনাম চৌধুরী মতো দলবদলের পথ খুঁজছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী?

Bootstrap Image Preview