সুনামগঞ্জের লাউড়গড়ে বিভিন্ন মামলার জেলখাটা ১৮জন আসামীকে নিয়ে ১টি চোরাচালান সিন্ডিকেড তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অবাধে বাংলাদেশে আসছে গরু, ঘোড়া, পাথর, কয়লা, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, কমলা ও অস্ত্র। এছাড়াও অবৈধ পথে আসছে মদ, গাঁজাসহ সকল ধরনের মাদকদ্রব্য।
সেই সাথে পাচারকৃত অবৈধ মালামাল থেকে বিজিবি ক্যাম্প, তানা-পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি অধিনায়ক (সি.ও) এর নাম ভাঙিয়ে করছে চাঁদাবাজি। এছাড়াও বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত জাদুকাটা নদীর ভারত সীমান্তে অবৈধভাবে প্রায় ৫ শতাধিক পাথর কোয়ারী নির্মাণ করার জন্য চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
এজন্য ৫ জনকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছে ১টি পাথর কোয়ারীর কমিটি। তাদের সাথে বিভিন্ন পদধারী রয়েছে আরো ২০ থেকে ৩০জন। কিন্তু অবৈধ পাথর কোয়ারীতে বালি চাপা পড়ে ও চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে জাদুকাটা নদীতে ডুবে এপর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে বিজিবি ও থানা সূত্রে জানা যায়, জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় ও চাঁনপুর সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, কয়লা, পাথর, গরু, ঘোড়া ও নাসিরউদ্দিন বিড়ি পাচারসহ জাদুকাটা নদীতে চাঁদাবাজি করার সময় সোর্স পরিচয়ধারী চাঁনপুর গ্রামের চোরাচালানী আবু বক্কর, লাউড়গড় গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে নুরু মিয়া, তার সহযোগী রাজ্জাক মিয়া, সাহিদাবাদ গ্রামের শামসুলের ছেলে সেলিম মিয়া, মাহাতাবপুর গ্রামের আলী আহমদের ছেলে রফিক মিয়া (নবীকুল) কে পৃথকভাবে পুলিশ ও বিজিবি গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর পর সম্প্রতি তারা জামিনে এসেছে। আর লাউড়গড় গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে আনসারুল মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বড়গোফ বারেকটিলা গ্রামের রফিকুল মিয়ার বিরুদ্ধে মাদক, পুরান লাউড় গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে আক্তার মিয়ার বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা জানায়, বর্তমানে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উপরের উল্লেখিত বিভিন্ন মামলার আসামীদেরকে নিয়ে সিন্ডিকেড তৈরি করে দাপটের সাথে প্রতিদিন ওপেন চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করছে লাউড়গড় গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে জজ মিয়া, একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আমিনুল মিয়া ও মাফিনুর, আব্দুল জলিলের ছেলে জসিম উদ্দিন, পুরান লাউড় গ্রামের মমিন মিয়ার ছেলে এরশাদ মিয়া, অলি ছোবাহানের ছেলে দিলহাজ মিয়া, সাহিদাবাদ গ্রামের আলী আকবরের ছেলে শহিদ মিয়া, নাজিম মিয়া ও লাউড়গড় গ্রামের অজ্ঞাত আরো ১ জনসহ বুরুঙ্গাছড়া গ্রামের ফিরোজ মিয়াগং।
তারা টেকেরঘাট ও চাঁনপুর সীমান্তের বড়ছড়া, রজনীলাইন, বুরুঙ্গাছড়া, নয়াছড়া, রাজাই, বারেকটিলা হয়ে লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী, পুরান লাউড় ও মনাইপাড় এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবৈধভাবে পাচারকৃত ১ লড়ি পাথর থেকে ২০০টাকা, ১বস্তা (৫০ কেজি কয়লা থেকে ১২০টাকা, ১টি ঘোড়া পাচাঁরের জন্য ৮হাজার টাকা, ১টি গরু থেকে ৫ হাজার টাকা, ১ ফুট কাঠ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা নেওয়াসহ মদ, গাঁজা, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, হেরুইন, ইয়াবা, কমলা ও অস্ত্র পাচারের জন্য সাপ্তাহিক ও মাসিক ২০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করছে। আর উত্তোলনকৃত চাঁদার টাকার মধ্যে শতকরা ৭০ টাকা ( ১লক্ষ টাকা মধ্যে ৭০হাজার টাকা) লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের ম্যাচ খরচ নিচ্ছে চোরাচালানী এরশাদ মিয়া, নুরু মিয়া, আমিনুল মিয়া, জজ মিয়া, দিলহাজ মিয়া ও চাঁনপুর ক্যাম্পের নামে নিচ্ছে আবু বক্কর, রফিকুল। আর শতকরা ৩০ টাকা ( ১লক্ষ টাকার মধ্যে মোট ৩০হাজার টাকা) সোর্সরা ভাগ-ভাটোয়ারা করে।
এ ব্যাপারে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার হাবিবের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সোর্সদের সাথে কথা বলেন আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাকসুদুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কোন সোর্স নাই, চোরাচালান ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধের জন্য শীগ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।