সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ না ভেঙে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেয়া শপথের বৈধতা নিয়ে রিটের বিষয়ে আজ আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ আবেদনের ওপর আদেশ দেবেন।
এর আগে গতকাল আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন ও সাকিব মাহবুব এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা শুনানি করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, এ কে এম এহসানুর রহমান এবং অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মুরাদ রেজা। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, অমিত তালুকদার প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস।
গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম তাওহীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এই রিট দায়ের করেন। রিটে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি সংবিধান অনুসারে দশম জাতীয় সংসদ না ভেঙে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আইনি নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশের জবাব না দেয়াই এই রিট আবেদন করা হয়।
৮ জানুয়ারির নোটিশে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে দিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সে অনুচ্ছেদ প্রতিপালন না করে পুনরায় সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ায় বর্তমানে দুইটি সংসদ বহাল রয়েছে, যা সংবিধান পরিপন্থী। কিন্তু সে নোটিশের কোনো জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয় বলে জানান ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সালে শুরু হওয়া দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন সম্পন্ন করে শপথ অনুষ্ঠান করেছেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গত ৩ জানুয়ারি নেয়া শপথ বাতিল বা প্রত্যাহার করতে স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে পূর্বের সংসদ সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। সে অনুযায়ী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ৩ জানুয়ারি নেয়া শপথে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথের জন্য নির্বাচিতদের উচিত ছিল ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা। ফলে, এই শপথ বাতিল করার জন্য আমরা বলেছি।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮(৩) এ বলা হয়েছে, ‘এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথগ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’
অনুচ্ছেদ ১২৩(৩) এ বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।