Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিলুপ্তির পথে সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপিঠা তৈরির উপকরণ 'ঢলুবাঁশ'

 কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:৩৫ AM
আপডেট: ১৫ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:৩৫ AM

bdmorning Image Preview


চুঙ্গাপুড়া পিঠা বা চুঙ্গা পিঠা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা। চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল)। তবে আগের মতো এখন আর গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খডকুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্যও এখন আর দেখা যায় না।

এক সময় ছিলো বাজারে মাছের মেলাও বসতো। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর হতে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল ,পাবদা, কই, মাগুর, মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিলো মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ ও (সনাতন ধর্মীদের) একটি অন্যতম ঐতিহ্য। বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা মাছ বিরান আর নারিকেলের পিঠা পরিবেশন না করলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেতো।

বর্তমানে সেই দিন আর নেই। চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদ ও হয় না। 

কমলগঞ্জ উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, গাজীপুরের পাহাড় ও চুঙ্গাবাড়ীতে এবং কমলগঞ্জের পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ী ও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে। অনেক আগেই বনদস্যু ও ভূমিদস্যু এবং পাহাড় খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। কিছু কিছু টিলায় এখন ও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়। পাহাড়ে বাঁশ নাই বলে বাজারে এই ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে এই ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজার সমুহে বিক্রির আশায়।

এই বাঁশটি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমানে খেড় (নেরা) দরকার পড়ে। এই খড়ও এখন প্রচুর দাম বেশি।  

Bootstrap Image Preview