Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনে ঐক্যের ফল ‘লাভবান গণফোরাম, ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি'

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:০৩ PM
আপডেট: ১৩ জানুয়ারী ২০১৯, ১০:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


জামায়াত প্রসঙ্গে বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন-উত্তর রাজনীতি এক নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার গণফোরাম কমিটির বৈঠক শেষে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, জামায়াতকে নিয়ে আমরা অতীতেও রাজনীতি করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না।

বিএনপির ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, জামায়াতকে ছাড়ার জন্য বিএনপিকে বলা যেতে পারে।

এর মধ্য দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো বিভক্তির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে?

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের শিক্ষক ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ জানান যে, এবারের নির্বাচনে যে দলটি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে সেটি হলো গণফোরাম। কেননা এবার তারা প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসন লাভ করেছে।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলাম রয়েছে এটা জেনেশুনেই তারা বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছে। এখন তারা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে সংসদে যাওয়ার একটি পথ খুঁজছে বলে তিনি মনে করেন।

তবে সংসদে যোগ দেয়ার প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের শরিক হিসেবে গণফোরামের ভেতরে কি কোনো চাপ তৈরি হচ্ছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সাঈদ ইফতেখার বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে যে ড. কামাল হোসেন এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছেন।

তার মতে, রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিকোণ থেকে গণফোরামের প্রতিষ্ঠা পাওয়া অনেক বড় ধরনের রাজনৈতিক সফলতা। কেননা এই দলটাকে মানুষ ভুলে যেতে বসেছিল। সেখানে যে তারা দুটি আসন পেয়েছে, তার মধ্যে একটি গণফোরামের নিজস্ব প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়ে।

ফলে এই দলটি থেকে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন সেইসঙ্গে যে কর্মীরা রয়েছেন তাদের ওপর সংসদে যাবার জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে তার ধারণা।

তবে গণফোরাম যে আসনটিতে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছে সে আসনে যদি বিএনপি সমর্থন না দিতো, গণফোরামের পক্ষে সেখানে জয়লাভ করাটা কি অসম্ভব হতো?

এ প্রসঙ্গে ড. সাঈদ ইফতেখার বলেন, পুরো বাংলাদেশের কোথাও গণফোরামের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। সেজন্য আমার মতে এবারের জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে গণফোরাম এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল হচ্ছে বিএনপি।

গণফোরামের লাভবান হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে গণফোরাম যে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে, সেটাকে তারা ব্যবহার করতে পেরেছে। এবং এটাই ড. কামাল হোসেনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সফলতা।

সুতরাং এখান থেকে ধারণা করা যায় যে গণফোরাম সংসদ বর্জন করবে না। আর তাই সংসদে যাওয়ার জন্য তারা একটি পথ তৈরির কৌশল হিসেবে জামায়াত প্রসঙ্গটিকে সামনে নিয়েছে এসেছে।

এদিকে বিএনপির সামনে যদি এমন কোনো পরিস্থিতির তৈরি হয় যে, হয় ঐক্যফ্রন্ট না হলে জামায়াতে ইসলামীকে বেছে নিতে হবে, তাহলে তাদের সামনে কোন পথটি বাস্তবসম্মত বা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হবে?

এমস প্রশ্নের উত্তরে ড. সাঈদ ইফতেখার বলেন, বিএনপির মধ্যে যে সংকটটি দেখা যাচ্ছে সেটি হল তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রেও, বিএনপি গত ১০ বছর ধরে জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল।

মতাদর্শের দিক থেকেও জামায়াত ও বিএনপি খুব কাছাকাছি বলে তিনি মনে করেন।

কিন্তু তার মতে, বাস্তবতা হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির যে পরিবর্তন, সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি একটা প্রান্তিক দিকে ধাবমান এবং তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে এবং আওয়ামী লীগও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা শক্ত অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এই হিসাবটা বিএনপি করতে পারছে না যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করে বিএনপির রাজনীতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন।

সুতরাং বিএনপি এই বাস্তবতা যতদিন ধরে বুঝতে না পারবে, ততদিন তারা ঐক্যফ্রন্টের চাইতে জামায়াতকে প্রাধান্য দেবে এবং জামায়াতের সাথে তাদের যে ঐক্য সেটা তারা ধরে রাখতে চেষ্টা করবে বলে তিনি মনে করেন।

কিন্তু বিএনপি যদি জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে সরে আসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। তাহলে জামায়াতে ইসলামীর যে ভোটার গোষ্ঠী বাংলাদেশে রয়েছে, সেটা কি তারা ছাড় দিতে পারবে?

মূলত এই বিষয়টিকে বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ড. সাঈদ ইফতেখার। কেননা জামায়াতের পাঁচ থেকে সাত শতাংশ ভোটারের গোষ্ঠী সেটাকে তারা ধরে রাখতে গিয়ে বিএনপি, অমুসলিম সম্প্রদায়ের ১০ বা ১২ শতাংশের ভোটব্যাংক থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন জোটবদ্ধ থাকার ফলে বিএনপি সেই জায়গাটি থেকে এখন বেরিয়ে আসতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন হচ্ছে, সেটাকে তারা নিতে পারছে না।

ড. সাঈদ ইফতেখার বলেন, সব মিলিয়ে বিএনপিকে আজকে যদি জামায়াতকে ছেড়ে আসতে হয়, তাহলে তাদের যে রাজনীতি, সেটাকে তাদের নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের যে কয়টি মৌলিক নীতি রয়েছে, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ক্ষেত্রে, সেখান থেকে তাদের সরে আসতে হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Bootstrap Image Preview