বিবাহ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন বিধান। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি অন্যতম চাহিদা হচ্ছে বিবাহ। বিবাহ মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত ও রাসুল (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মানুষের চারিত্রিক অবক্ষয় রোধে বিয়ে অনুপম হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদাপূরণ ও মানবিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ। বিয়ে ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান।
বিবাহে বিষয় পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- তিনি তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জীবনসঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। (সুরা রুম, আয়াত :২১)
ইসলামে বিবাহের যাবতীয় নিয়ম-কানুন এবং বিধান সম্পর্কে আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো-
ইসলামে বিবাহের রুকন
১. বর-কনে উভয়ে বিবাহ সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হওয়া।
২. ইজাব বা প্রস্তাবনা হচ্ছে বরের কাছে মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব উপস্থান করা। যেমন, ‘আমি অমুককে তোমার কাছে বিবাহ দিলাম’ অথবা এ ধরনের অন্য কোনভাবে প্রস্তাব পেশ করা।
৩. কবুল বলা: এটি বর বা তার প্রতিনিধির সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন, ‘আমি কবুল বা গ্রহণ করলাম’ ইত্যাদি।
বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
১) বিবাহে বর-কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
২) নবদম্পতি একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। এ বিষয় রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বামীহারা নারী (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)-কে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিবাহ দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! কেমন করে তার সম্মতি জানব? তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জার দরুন) থাকাটাই তার সম্মতি।’ (বুখারি, হাদিস নং : ৪৭৪১)
৩) বিবাহের চুক্তি করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিবাহ দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও।’ (সুরা নুর, ২৪:৩২)
নবি (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১০২১)
৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোনো বিবাহ নেই।’ (সহিহ জামে, হাদিস নং : ৭৫৫৮)
বিবাহর ক্ষেত্রে সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার-৩/৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)
বিবাহের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি। এ বিষয় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিবাহের বিষয়টি ঘোষণা কর।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ১০৭২)
কনের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত
১) সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া।
২) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
৩) দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।
৪) কনের অভিভাবক ধর্মানুসারী হওয়া। সুতরাং কোনো অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
৫) ন্যায়পরায়ণ হওয়া। কিছু কিছু আলেম এ শর্তটি আরোপ করেছেন। অন্যেরা বাহ্যিক ‘আদালত’কে (ধর্মভীরুতা) যথেষ্ট বলেছেন। আবার কারো কারো মতে, যাকে তিনি বিবাহ দিচ্ছেন তার কল্যাণ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকলেও চলবে।
৬.পুরুষ হওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক নারী অন্য নারীকে বিবাহ দিতে পারবে না। অথবা নারী নিজে নিজেকে বিবাহ দিতে পারবে না। ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিবাহ দেয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৭৮২; সহিহ জামে : ৭২৯৮)