Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পটুয়াখালীতে ৪৭ কেজিতে মণ, প্রতারিত কৃষক

জাহিদ রিপন, পটুয়াখলী প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:৪৪ PM
আপডেট: ০৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:৪৪ PM

bdmorning Image Preview


দেশের সর্বত্র ৪০ কেজিতে মণ প্রচলিত থাকলেও ৪৭ কেজি হিসাবে মণ ধরে ধান বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে পটুয়াখলীর কৃষকদের। ওজনের ক্ষেত্রে মিটার পদ্ধতি ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও সনাতনী পদ্ধতিতে পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহার করে এ চক্র মণ প্রতি আরো প্রায় দেড় কেজি ধান হাতিয়ে নিচ্ছে কৃষকের কাছ থেকে। পটুয়াখালীর ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী এসব মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িযা বা দালালদের জিম্মির কারণে ধান বিক্রি করে কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না প্রান্তিক কৃষক। ফলে উৎপাদিত ফসলের প্রকৃতমূল্য না পাওয়ায় ধান চাষে লোকসানের মুখে জেলার অনেক বর্গাচাষী কৃষক।

আর এভাবে লোকসানের মুখে পরে অধিকাংশ কৃষক পরিবার হয়ে পড়েছে ঋণগ্রস্থ। যার বিরুপ প্রভাব অচিরেই পড়তে পারে দেশের গ্রামীণ কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে। এমন ধারণা সংশ্লিস্টদের।

কেবলমাত্র প্রকৃতিকে নির্ভর করে, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং পোকার আক্রমণ কম থাকায় জেলায় প্রতিবছর বাড়ছে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। জেলায় রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক পরিবার। দক্ষিণের এ জনপদের অনেক কৃষকদের নেই নিজ মালিকানায় কৃষি জমি। ফলে অন্যের জমি একসনা চাষ করে মালিককে দিতে হয় মোট ধানের অর্ধেক। এরপর রয়েছে ফসলের উৎপাদন ব্যয়। আবার অভাবের তাড়নায় আর চাষাবাদের সময়কার ঋণের দায়ভার মেটাতে অসহায় এসব প্রান্তিক কৃষক বাধ্য হচ্ছে কম দামে ধান বিক্রি করতে।

কৃষকদের অভিযোগ, প্রতি বছর কৃষকের গোলায় ধান উঠতে না উঠতেই মধ্যস্বত্বভোগীদের তৎপরতায় ধানের বাজারমূল্য থাকে নিম্নমুখী। মৌসুমের শুরুতে ধানের মূল্য নির্ধারণসহ সরকারিভাবে ধান ক্রয় না করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব ফড়িয়া-দালালরা প্রতিটি হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বাইরের কোন ক্রেতা ধান বাজারে আসতে না পারায় এ চক্রের কাছেই ধান বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক।

এসব ফড়িয়া-দালালরা কৃষককে জিম্মি করে প্রতি মনে ৪০ কেজির পরিবর্তে ৪৭ কেজি হিসাবে ৭ কেজি ধান বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক সময় ধান বিক্রি করে অনেক সময় নগদ টাকা পর্যন্ত পায় না কৃষক। বিক্রির সপ্তাহ থেকে এক মাস পরেও টাকা নিতে বাধ্য করা হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকের ধান বিক্রি করেই ওই টাকা শোধ দেয়া হচ্ছে। মাঝখান থেকে বিনা পুজিঁতেই হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মুনাফা।

ধানখালীর কৃষক রিয়াজ মৃধা বলেন, মৌসুমের শুরুতে মণ প্রতি ধানের দাম ছিল ৫শ’ থেকে সাড়ে পাঁচ শত টাকা। বর্তমানে বাজার দর হচ্ছে সাতশ’ থেকে সাড়ে সাতশ’ টাকা অথচ মণ প্রতি উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ছয়শ’ টাকা। দেশের সর্বত্র ৪০ কেজিতে মণ প্রচলিত থাকলেও এখানকার ফড়িয়ারা মণ প্রতি প্রায় সাত কেজি ধান মাপে বেশি নিচ্ছে।

কলাপাড়া কৃষক মৈত্রীর সভাপতি আলাউদ্দিন শিকদার বলেন, ওজনের ক্ষেত্রে মিটার পদ্ধতি ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উদাসীনতা এবং অব্যস্থাপনায় জেলার ধানের বাজারে নেই কোন মনিটরিং ব্যবস্থা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী চক্র ওজন কারচুপির মাধ্যমে জেলার ধানের বাজার থেকে প্রতিবছর হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় শত কোটি টাকা।

কৃষানী লাইলী বেগম বলেন, মৌসুমের শুরুতে ধানের বাজারমূল্য নির্ধারণ না করায় দালাল চক্র সিন্ডিকেট কৃষকদের কম দামে ধান বিক্রিতে বাধ্য করছে। উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ধানের বাজার দর নির্ধারণ করে, সরাসরি এ অফিসের মাধ্যমে ধান ক্রয় করা প্রয়োজন। তাহলে ওজনে বেশি নিয়ে ধানের দাম কম দিয়ে দালাল চক্র কৃষকদের সাথে প্রতারণা করতে পারত না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হৃদয়েশ্বর দত্ত জানান, এ বছর জেলায় ২লক্ষ ২হাজার ৬০৮ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদন হয়েছে। যা থেকে ৫লক্ষ ১০ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। বিগত বছরের তুলনায় ৫ হেক্টর জমি কম হলেও উৎপাদন বেড়েছে অনেক। এখন পর্যন্ত ৬৮ শতাংশ জমির ফসল কর্তন হয়েছে। এতেই ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ১৯৬ মেট্রিক টণ উৎপাদন হয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় বেসরকারিভাবে পাঁচটি অটো রাইস মিল রয়েছে। এসব মিল থেকে চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাউফলের কালাইয়া এবং কালিশুরিতে আরো দুটি চালু হচ্ছে। এ জেলায় আরো মিল বৃদ্ধি পেলে আমন সংগ্রহ বাড়াতে পারব। পাশপাশি বোরোর ন্যায় আমন ধান সংগ্রহের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে আমন ধান সংগ্রহ করলে কৃষক সরাসরি উপকৃত হবে।         

Bootstrap Image Preview