Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে 'মধু বৃক্ষ'

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:০৮ AM
আপডেট: ০৬ জানুয়ারী ২০১৯, ১১:০৮ AM

bdmorning Image Preview


হারিয়ে যাচ্ছে ঝিনাইদহের ঐতিহ্য 'মধু বৃক্ষ' খেজুর গাছ। একসময় এখানকার খেজুরের রস ও গুড় প্রসিদ্ধ ছিল। মার্কেটে এর চাহিদা ছিল প্রচুর দহ জেলার কালীগঞ্জ, মহেশপুর, কোটচাঁদপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ শীতকালীন সময়ে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিল খেজুর গাছের উপর। সেই হিসেবে খেজুর গাছ অর্থকারী ফসলের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এখন আর খেজুর গাছের উপরে ভরসা করছে না।

প্রায় ৯'শ বছর পূর্বে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে খেজুর গাছ ছিল। কৃষকরা খেজুর বাগান তৈরি করতো বাণিজ্যিকভাবে। প্রাকৃতিকভাবেও এটা জন্মাতো। এই খেজুর গাছ কে ঘিরে তৈরি হতো মহল। যারা গাছ কাটে তাদেরকে বলা হতো গাছী এবং রস জ্বালানোর আকাকে বলা হতো বান, হাড়িকে বলা হতো জ্বালা, টিনের গুলিকে বলা হতো তাপাল।

বৃটিশ আমলে ঝিনাইদহ জেলায় খেজুরের চিনি উৎপাদনের জন্য প্রচুর কারখানা গড়ে ওঠে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় প্রচুর পরিমান খেজুরের গুড় ও চিনি উৎপাদনের কথা শোনা যেত। কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেষে চিনি উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছিল।

খেজুরের চিনি তৈরী করতে পাট্টা শেয়ালার প্রয়োজন হতো বৃটিশ অমলে বঙ্গদেশে খেজুরের গুড় থেকে চিনি তৈরির প্রধান কারখানা ছিল কোটচাঁদপুরে। সে সময় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন গরুর গাড়িতে করে গুড় বিক্রির জন্য কোটচাঁদপুরে আসতো। কপোতাক্ষ ও ভৈরব নদী দিয়ে লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা দিয়ে বরিশাল ও নোয়াখালী জেলায় ব্যবসায়ীরা খেজুরের গুড় নিয়ে যেত এবং সেখান থেকে অন্য মালামাল বৃহত্তর যশোর জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হতো।

উনবিংশ শতাদ্বীর প্রথমভাগে ইউরোপ হতে চিনি কারবার করতে এ দেশে আসে মি. ব্লেক সাহেব পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার (ভারত) বাগদা নামক স্থানে প্রথমে খেজুরের গুড় থেকে চিনি প্রস্তুত কারখানা হয়। কিন্তু সেখানে প্রচুর লোকসান হতে থাকে। কোটচাঁদপুর এই চিনির ব্যবসার সুনাম থাকায় চিনি কোম্পানি পর্যায়ক্রমে চৌগাছায় চিনির কারখানা চালু করেন কলকাতার গ্লায়েটান উইল এন্ড কোং এবং এর ম্যানেজার ছিলেন ম্যাকলিয়ড সাহেব।

১৮৬১ সালের দিকে এই অঞ্চলে অনেক কারখানা গড়ে উঠে। ইউরোপীয়দের মতে চিনি ছাড়াও মদ তৈরি করা হতো। কারখানা ক্রমেই লোকসানের পরিমান বেশি হওয়ায় ১৮৮০ সালে মিঃ নিউ হাউস বিক্রি করে দেন এমেট চেম্বার্স কোম্পানির নিকট।

১৮৭৪ সালের একটি হিসাব মতে, কোটচাঁদপুর ৬৩ টি চিনি কারখানা চালু ছিল। ১৯০৯ সালের পর চিনি শিল্প বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত দুই বাংলায় গুড়ের ব্যবসা ছিল জমজমাট। মহেশপুর অঞ্চলের লোকজন পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার মাজদে বাজারে গুড় বিক্রি করে সাপ্তাহিক বাজার করে নিয়ে আসতো। দেশ স্বাধীনের পর এ অঞ্চলের অধিকাংশ খেজুরের গুড় রপ্তানি করা হতো সিলেট অঞ্চলে।

বর্তমানে খেজুর গাছ নিধন এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হওয়ায় খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও কালীগঞ্জ শহরে বিশাল গুড়ের হাট রয়েছে। সাপ্তাহিক ২ টি হাটে প্রায় ৫ থেকে ৭ ট্রাক গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চলে যায়। এ হাটে পায়কারি হিসাবে গুড়ের ভাড় বিক্রি হয়। একসময় কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুরে বড় বড় ব্যবসায়িরা গুড় ষ্টক করে রাখতো। দাম বেশি হলে তারা বিক্রি করতো।


 

Bootstrap Image Preview