Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনী সুরক্ষা ও সমস্যা

মো: রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী
প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:৩৪ PM
আপডেট: ০৫ জানুয়ারী ২০১৯, ১২:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারী ও শিশুর প্রতি নানারকম নিষ্ঠুর  নির্যাতন-নিপীড়ন, লাঞ্ছনা-গঞ্জনার খবর প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে পাচ্ছি। কিস্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেসব ঘৃণিত অপরাধের আলোচিত সংবাদ হচ্ছে ‘ধর্ষণ’।

সমাজ সচেতন নাগরিকরা যারা সমাজিক অনাচার, সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলে, লিখে বা চিন্তা করে, তারা সবাই বর্তমানে ভীষণ বিষণ্ণ, ক্ষুব্ধ। যদিও আমাদের দেশের আইনানুযায়ী ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ। যেখানে নারীদের বহুমাত্রিক সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে এবং অপরাধীর কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বিশেষ করে দণ্ডবিধি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুস্পষ্টভাবে ধর্ষণের অপরাধ ও কঠোর শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তারপরেও চারপাশে বিভিন্ন কায়দায় ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নারীরা। এমনকি বর্বরোচিত ধর্ষণের পর  ধর্ষিতাকে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ধর্ষণের খবর অনেক সময় মিডিয়ায় আসে না। আলোচনায় আসে না। বিচার চাইতে যায় না। অপরাধী ধর্ষকদের সাজা হয় না। কারণ ধর্ষণের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবার সামাজিকতার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বাধ্য হয়। এছাড়াও অনেক সময়ে ধর্ষকের ভয়ে অনেকেই আইনের আশ্রয় নেন না। নিলেও পুলিশি-ডাক্তারি হেনস্তা, কোর্টে নানা সমস্যা ও মামলার জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতার কারনে অনেকেই আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে চাই না। আবার সঠিকভাবে আইন ও অধিকার সম্পর্কে না জানার কারণেও অনেক নারী পাচ্ছে না তাদের ন্যায্য আইনগত অধিকার। আবার এসব জানলেও অধিকার আদায়ে সোচ্চার কিংবা আইনের আশ্রয়ে যেতে চান না বিভিন্ন ঝক্কি-ঝামেলার কারণে। মূলত ধর্ষিতা নারীর আত্মসম্মান বা পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা, লোকলজ্জা, সমাজে রটে যাওয়ার ভয়, ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তা, জীবননাশের হুমকি বা নিরাপত্তাহীনতা, হয়রানিসহ বিভিন্ন কারণ এর পেছনে কাজ করে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
 
ধর্ষণের আইনি সংজ্ঞা: আমাদের দেশে বিদ্যমান ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায়, যদি কোনো পুরুষ বৈধ বিবাহবন্ধন ছাড়া ষোল বছরের বেশি বয়সের কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন করে বা প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে যৌনসঙ্গম করলে অথবা ষোল বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া যৌনসঙ্গম করলে তখন উক্ত নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে গণ্য হবে।

উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ১৩ বছরের কম বয়সের বিবাহিত নারীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলেও ধর্ষণ হবে। অন্য ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে, উল্লেখিত ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণের জন্য যৌনসঙ্গমে যৌনাঙ্গ প্রবিষ্ট করাই যথেষ্ট বিবেচিত হবে। এখানে ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে’ বলতে সরাসরিভাবে অনিচ্ছুক বা আগ্রহী না হওয়া। আরো বোঝাবে, নিদ্রিত অবস্থায় বা কোনো প্রকারে নেশাগ্রস্ত করে বা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন কোনো নারীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করা। আর ‘সম্মতি ছাড়া’ বলতে, স্বাধীন বা স্বেচ্ছাকৃতভাবে যৌনসঙ্গমে নারীর অনুমতি না দেয়া। ‘ভীতিপ্রদর্শন’ বলতে, নারীকে কোনোভাবে মৃত্যুভয় বা মারাত্মক বা হালকা শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে কোনো প্রকার আঘাত করা বা হুমকি প্রদর্শন করে সম্মতি আদায় করে যৌনসঙ্গম করা। আইনে প্রতারণামূলক সম্মতি আদায় বলতে বোঝানো হচ্ছে, বিয়ে হয়েছে বা বিয়ে কার্যকর আছে তথা পুরুষটি জানে যে, সে স্ত্রীলোকটির স্বামী নয় এবং স্ত্রীলোক পুরুষলোকের সঙ্গে বৈধ বিবাহ হয়েছে বলে বিশ্বাস করে। বিবাহিত স্ত্রীর বয়স যদি তেরো বছরের বেশি হয় তাহলে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু ইত্যাদির কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। উপধারা ১-এ শুধু ধর্ষণের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনে নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উপধারা ২-এ ধর্ষণজনিত কারণে ধর্ষিতা নারীর মৃত্যু হলে তার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণপরবর্তী তার অন্য কোনো কার্যকলাপের ফলে যদি ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অতিরিক্ত অনূ্যন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

উপধারা তিন-এ দলগতভাবে ধর্ষণ করলে তার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারেন। অর্থাৎ সবাই সমান অপরাধী। উপধারা ৪-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নারী বা শিশুকে- (ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন; (খ) শুধুই ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ব্যক্তি অনধিক দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডনীয় হবেন।

উপধারা পাঁচ অনুযায়ী, যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে কোনো নারী ধর্ষিত হন, তাহলে যাদের হেফাজতে থাকাকালে ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা ধর্ষিত নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

উল্লেখ্য, আইনানুগভাবে ধর্ষণের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগকারী ধর্ষিতাকেই প্রমাণ করতে হয় এবং আদালতের কাছে সংশ্লিষ্ট সব সাক্ষ্য যথাসম্ভব সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হয়। কিন্তু পেশাগতভাবে পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত কোনো নারী যদি ধর্ষণের অভিযোগ করে তাহলে সেই বিষয়ে তার নিজের বিবৃতি যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয় না। তাকে ধর্ষণের অভিযোগ অত্যন্ত জোরালো সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হয়। সাধারণত একটি ধর্ষণের মামলায় ধর্ষিতাই একমাত্র সাক্ষী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি তার চরিত্র নিয়ে কোনো ইঙ্গিত করেন, তাতে তার একান্ত সাক্ষ্য সহজেই দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় ‘চরিত্রবিশ্লেষণ’ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘একটি ধর্ষণ মামলার বাদী যদি সাধারণভাবেই একজন অনৈতিক চরিত্রের অধিকারিণী হন, তাহলে তার চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য ধর্ষণকারীর বা হরণকারীর পক্ষে আদালতে ব্যবহার করা যাবে অর্থাৎ ওই বিধানে চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যকে বিচারকাজে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই আইনি বিধানের সুযোগ নিয়ে বিচারে প্রায়ই ভিকটিমেন বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে আদালতে। সেই সুযোগ আসামির পক্ষের কৌসুঁলিরা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী ভিকটিমের অতীত যৌন অভিজ্ঞতা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এজলাসে অভিযোগকারী নারীকে যখন নিজের ধর্ষিত হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে হয়, তখন চারপাশে উৎসুক চোখের চাহনি আর মুচকি হাসি-তামাশা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ দেখা যায়। ভিকটিমকে ‘দুশ্চরিত্রা’ প্রমাণ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঘটনায় স্বেচ্ছায় সম্মতি দিয়েছে মর্মে আদালতে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। অবশ্যই একজন ধর্ষিতার ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে এসব আইন কঠিনভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দুশ্চরিত্র বা ‘চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য’ ধারণাটি আইনে আছে বলেই আদালত ধর্ষণের মামলাকারিণীর চরিত্র এবং তার আগের যৌন সম্পর্কের ইতিহাসকে প্রাসঙ্গিক বলে ধরে নেন।

ভিকটিমের অতীত যৌন ইতিহাস নিয়ে কথোপকথন ও জিজ্ঞাসাবাদের সংস্কৃতি চালু থাকার কারণে বেশিরভাগ নারী ধর্ষণমামলার অভিযোগ আনতে ভয় পান। অনেকেই মামলা মাঝপথে বন্ধই করে দেন। অনেক সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীর জেরায় ভিকটিম নারী মানসিক, সামাজিক ও শারীরিকভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েন। যার কারণে ধর্ষণের অভিযোগ বিচারের বাইরে থেকে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো আইনি ভাষায় ব্যবহৃত ‘দুশ্চরিত্রা’ শব্দের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন আইনেই নেই। আইনে সুনির্দিষ্ট নেই যে একজন নারী কী কী করলে তাকে দুশ্চরিত্রা বলা যায়। ২০০০ সালে বিচারপতি বিপি জীবন রেড্ডির নেতৃত্বাধীন আইন কমিশনের সুপারিশক্রমে ভারত সরকার ২০০৩ সালে এই ধারা বাতিল করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা আমাদের দেশেও সম্পূর্ণ বাতিল করার দাবি তুলেছেন অনেকেই। এসব কারণেই কথিত আছে যে বর্তমান বিচারব্যবস্থায় ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে ধর্ষিতাকে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ হতে হয়। ধর্ষণ মামলায় নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কারণ ডাক্তারি পরীক্ষা থেকে শুরু করে তদন্ত কর্মকাণ্ডে এবং বিচার চলাকালীন সাক্ষী জবানবন্দী ও জেরায় নানা উপায়ে একজন ধর্ষিতাকে বারবার প্রমাণ করতে হয় সে ধর্ষিত।

তবে সাক্ষ্য আইনের ধারা ১৫১ ও ১৫২ যে কোনো মামলায় অভিযোগকারী সাক্ষীকে অশোভন, লজ্জাজনক, আক্রমণাত্মক ও বিরক্তিকর প্রশ্ন করা থেকে সাধারণ সুরক্ষা দিয়েছে। ভয় বা লজ্জামুক্ত সাক্ষ্যের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মামলায় আদালত/ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনে রুদ্ধদ্বার কক্ষে (trial in camera) বিচার কার্যক্রম চালাতে পারেন। এতে ভুক্তভোগী বা সাক্ষী বিরূপ কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন, যা জনাকীর্ণ উন্মুক্ত আদালতে তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।

দেশের আদালতগুলোতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অনির্দিষ্টকাল বিচার চলছে। এমনও অনেক নজির আছে যে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। যদিও ১৮০ দিনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার আইনি বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন মেনে কাজ করছেন না বা করতে পারছেন না নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা। এতে আসামিরা যেমন সীমাহীন কষ্টে ভুগছেন, তেমনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অভিযোগকারিণী। দীর্ঘদিনেও মামলার সুরাহা না হওয়ায় দুই পক্ষেরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে আদালতে বিচার চালাতে গিয়ে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নির্ধারিত ১৮০ দিন সময়ের মধ্যে মামলা শেষ না হলে কী করতে হবে, বিধানে তা বলা নেই। তবে আইনে আছে, কোনো মামলা নির্ধারিত সময়ে শেষ না হলে সেটা ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিচার হবে। কিন্তু ফৌজদারি মামলায়ও কোনো সময়সীমা উল্লেখ নেই। আইনের এসব ফাঁকফোকরে পড়েই উভয়পক্ষ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ধারা-১৪ অনুযায়ী ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশে রয়েছে বিধিনিষেধ তথা বিশেষ নির্দেশনা। যা ভিকটিমের পারিবারিক সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্মানে সুরক্ষা দেয়। একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ধর্ষণের সংবাদ এমনভাবে খবরটা প্রকাশ বা প্রচার করছে, তাতে বিষয়টিতে অন্যদের আরও বেশি করে সুড়সুড়ি দেওয়ার মতো। এ প্রবণতা থেকে বের হতে হবে। আইনে বলা হয়েছে কোন নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা সে সম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্য তথ্য কোনো সংবাদপত্রে বা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাবে যাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়। এবং এই বিধান লঙ্ঘনকারী দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের প্রত্যেকে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কিন্তু খবর কিভাবে পরিবেশন করবে সে সম্পর্কে বলা হয়নি। যার কারণে বাস্তবে এই আইন মানা হচ্ছে না মিডিয়াগুলোতে।

আমি ধর্ষণের বা মনস্তত্ত্ব বিষয়ের কোনো বিশেষজ্ঞ নই। তবে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে বলতে পারি, সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও আন্তরিকতা এবং আইনের নিরবচ্ছিন্ন দ্রুত ও সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং ব্যবহার ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিক সুরক্ষা বহুলাংশে নিশ্চিত করবে।

লেখক: আইনজীবী; চট্টগ্রাম জজ কোর্ট
 মহাসচিব, বাংলাদেশ লিগ্যাল এওয়ারনেস ফাউন্ডেশন

Bootstrap Image Preview