Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মালয়েশিয়ায় পুলিশের হয়রানির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ বাংলাদেশির

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৮ PM
আপডেট: ০৩ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মালয়েশিয়ায় পুলিশের হয়রানির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন এক বাংলাদেশি। বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়া এবং পাসপোর্টের মেয়াদ থাকার পরও তাকে গ্রেফতার করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছিল। গত ১ জানুয়ারি ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে অনলাইন ভার্সনে এ অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ হলে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠে।

গ্রেফতারের দুই সপ্তাহ পরে তার বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। পরে আইনজীবীর সহায়তায় মুক্তি পেলে মালয়েশীয় পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশি ভুক্তভোগী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (৩০)।

সংবাদমাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানায়, অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনায় মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত ত্রুটির সমালোচনা করে মোয়াজ্জেমের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘সেলাঙ্গোর অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং কাউন্সিল।’ মালয়েশীয় সংস্থাটির এক সদস্য বলেছেন, নাজিব রাজাকের সরকারের মতো মাহাথির মোহাম্মদের সরকারও সুষ্ঠু সমাধান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। একমাত্র আদালতই পারে রায়ের মাধ্যমে অভিবাসীদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত দিক নির্দেশনা দিতে।

মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, গত ১ অক্টোবর তাকে মালয়েশিয়ার পুলিশ অভিবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার করে। অথচ তখন তিনি বৈধভাবেই মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তার আইনজীবী জানিয়েছেন, মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন তার পাসপোর্ট বৈধ ছিল। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধ বিদেশি কর্মীদের কাজ করার অনুমতি প্রদানের যে প্রক্রিয়া ঘোষণা করেছে, সে প্রক্রিয়ায় বৈধতা পেতে তিনি নিবন্ধনও নিয়েছিলেন। তারপরও মালয়েশিয়ার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

মোয়াজ্জেমের আইনজীবী আদালতে যুক্তি উপস্থাপনের সময়ে আরেকটি মামলার উদাহরণ দেন, যেখানে আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকার সূত্রে আটক অভিবাসী কর্মীকে মুক্তি পেতে দেখা গেছে। এর প্রেক্ষিতে আদালত মোয়াজ্জেমকে মুক্তির আদেশ দেয়। এদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন পুলিশের হয়রানির যে মামলা দায়ের করেছেন তার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে ১৫ জানুয়ারি।

এর মাধ্যমে সরকারের কিছুটা হলেও ‘হুঁশ ফিরতে পারে’ মন্তব্য করে ‘সেলাঙ্গোর অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং কাউন্সিলের’ সদস্য আবদুল আজিজ ইসমাইল বলেছেন, মোয়াজ্জেমের ঘটনাটিই এ ধরনের একমাত্র ঘটনা নয়। সরকারের ‘রিহায়ারিং প্রোগ্রামে’ নিবন্ধিত হওয়া সত্ত্বেও অনেক অভিবাসী কর্মীকে আটক করা হয়েছিল। পরে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দাবির মুখে তাদের কেউ কেউ মুক্তি পেতে সমর্থ হয়েছেন।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘রিহায়ারিং প্রোগ্রামে’ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন সাত লাখেরও বেশি অভিবাসী কর্মী। তবে এ প্রক্রিয়ায় সফলভাবে নিবন্ধিত হতে পেরেছেন মাত্র এক লাখ ১০ হাজারের কিছু বেশি। আবদুল আজিজ ইসমাইলের প্রশ্ন, ‘বাকিদের কী হবে? অথচ তারা বৈধ হওয়ার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছেন। তাদের বৈধতার প্রশ্নটি ঝুলে আছে। পুনর্বহাল করা হবে কি না, সে ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই।

আবদুল আজিজ ইসমাইলের ভাষ্য, ‘নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পুরোটাই ভুল। প্রথমে নির্ধারণ করা উচিত, একজন কর্মী তার নিবন্ধন পুনর্বহালের যোগ্য কি না। যদি যোগ্য হন, তাহলেই শুধু তাকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। বিশাল সংখ্যক কর্মী অর্থ পরিশোধ করেছে অথচ তাদের বৈধতার প্রশ্নটি রেখে দেওয়া হয়েছে ধোঁয়াশার মধ্যে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক পক্ষের ওপর থেকেই আমাদের বিশ্বাস উঠে গেছে। একমাত্র বিকল্প হচ্ছে, আদালতের মাধ্যমে তাদের টনক নড়ানোর ব্যবস্থা করা। তারাই রায়ের মাধ্যমে বিধি নির্ধারণ করে দিতে পারেন, যার ওপর আমরা নির্ভর করতে পারব।’

বিদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া যে ব্যয়বহুল -সে বিষয়ে সরকারের কোনো বিবেচনা আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এ অধিকার কর্মী। মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, অভিবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে দিনে গড়ে ৪০টি অভিযান পরিচালিত হয়। একেকটি অভিযানের খরচ পড়ে প্রায় ৩০ হাজার মালয়েশীয় রিঙ্গিত। অর্থাৎ বছরে এসব অভিযানে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ ৪০ মিলিয়ন রিঙ্গিত বা তারও বেশি।

Bootstrap Image Preview