ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সরকারের দেয়া বিনামূল্যে বিতরণের জন্য বই পেতে টাকা দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বুধবার দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের মোড়লহাট জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ করেন।
ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জসিম উদ্দীন। সে মোড়ল হাট এলাকার মাসুদ রানা ছেলে। জসিম উদ্দীন ও তার বন্ধুরা বই নিয়ে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে জানায়, বই পেতে ২৫০ টাকা দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষকদের টাকা পরিশোধ করলে নতুন বই দিচ্ছে না হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদা পারভীন বই নিয়ে ফেরার পথে জানতে চাইলে জানায়, তার কাছ থেকেও ২৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে বই প্রদানের জন্য।
বই নিয়ে ফেরার পথে কয়েকজন অভিভাবকের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়, বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর থেকেই নতুন নতুন নিয়ম শিখছেন তারা। এক বছর পর পর নতুন শ্রেণিতে পুনরায় ভর্তির জন্য ফরম কিনতে হবে ৩০ টাকা দিয়ে, সরকারি ফ্রি বই পেতে ২৫০ টাকা লাগবে। এত নিয়মে বিরক্ত হচ্ছেন অভিভাবকরা।
তাছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টিতে শিক্ষার্থীরা হোচট খাচ্ছেন মত প্রকাশ করেন কয়েকজন অভিভাবক।
নবম শ্রেণির ছাত্র হাবিব, সায়েম আলী ও রাজু জানায়, টাকা দিয়ে বই নিতে হবে, এমনটা জানলে স্কুলে আসতাম না। শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে পড়ালেখায় মনযোগী হতেও বাধা গ্রস্ত হচ্ছেন বলেও তারা জানায়।
হাবিব অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি থেকে বাবা প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের বলার পরও কোন লাভ হচ্ছে না। আমি আজকে টাকা জমা দিয়েছি। বই পাইনি। কালকে বই দিবে। এখন স্কুল দুপুর ১টা না বাজতেই বন্ধ করে দিলো। কালকে স্কুলে আসতে বললো।
অভিযোগ অস্বীকার করে মোড়ল হাট জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোলাইমান আলী জানান, কিছু লোক আমাদের পিছনে লেগে আছে বিদ্যালয়ে বদনাম ছড়ানোর জন্য। এরাই আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে। ২৫০ টাকা কিসের জন্য নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, ওই টাকা সেশন চার্জ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
কোন ধরণের সেশন চার্জ নেওয়া যাবে না বলে জানান বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, মোড়লহাট জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযোগ আমিও পেয়েছি। ইতিমধ্যে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে যেন সেশন চার্জ নেওয়া বন্ধ করে, শিক্ষার্থীদের দ্রুত বিনামূল্যে বই বিতরণ শেষ করা হয়, সে তাগিদও প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, লিখিত কোন অভিযোগ কেউ দিলে বিষয়টি তদন্ত করার সুবিধা হতো। ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।