Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘অবিশ্বাস্য’, আওয়ামী প্লাবনে খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বিএনপি-জামাত জোট: আনন্দবাজার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:৪১ PM
আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:৪১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


গতকাল রোববার বাংলাদেশের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোট ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৫৯ আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ৮ আসন, জাতীয় পার্টি (জাপা) ২২ আসন এবং অন্যান্য দল পেয়েছে ৮ আসন।

বাংলাদেশের এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। সোমবার বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেই প্রধান খবর হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল।

তারই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার খবরে চমকপ্রদ এক শিরোনাম দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘অবিশ্বাস্য’, আওয়ামী প্লাবনে খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বিএনপি-জামাত জোট, বাংলাদেশে ইতিহাস।

শেখ হাসিনা নিশ্চিত ছিলেন যে, তাঁর দলই জিতবে। কিন্তু এতটা বিশাল জয় পাবেন তা সম্ভবত তিনিও ভাবেননি। বাস্তবে অভাবিত ফল দিল বাংলাদেশের ভোট। আওয়ামী লীগের বিপুল জয়জয়কার, প্রায় মুছে গেল বিরোধীরা। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ভেঙে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় শেখ হাসিনা। শুধু দল নয়, রেকর্ড করেছেন মুজিব কন্যাও। গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২ লা্খ ৩২ হাজার ভোট পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। সেখানে বিএনপি প্রার্থী এস এম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৩টি ভোট।

ফলের আভাস স্পষ্ট হতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পাশে নিয়ে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কামাল হোসেন ঘোষণা করেছেন, এই ফল তাঁরা প্রত্যাখ্যান করছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে দেশে ফের ভোটের দাবি জানাচ্ছেন তিনি।

কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সকাল আটটা বাজা মাত্রই ঢাকায় নিজের বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। ভোট দিয়ে আঙুল তুলে বিজয়-চিহ্ন দেখালেন তিনি। এরপর দেশী-বিদেশী সংবাদিকদের বললেন, মানুষ যে রায় দেবে, তা মাথা পেতে নেব। আমি নিশ্চিত সাধারণ মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়ী করবেন। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবেন।

নৌকাডুবির প্রতিজ্ঞায় এবার জোট বেঁধেছিল বিরোধীদের জোট। দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়াই ভোটে নেমে কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রবের মতো নামী মুক্তিযোদ্ধাদের হাত ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েছিল বিএনপি। অন্য হাত অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা জামাতের হাতেই ছিল। তাদের ২২ জন নেতাকে নিজেদের প্রতীক ধানের শীষ দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছিল, যেকোনো  উপায়ে ক্ষমতায় ফিরতে তারা মরিয়া। দলের নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বর্ষীয়ান নেতা নজরুল ইসলাম বললেন, 'কেউ জামাত নয়, ধানের শিষ নিয়ে লড়ছেন যারা—সকলেই বিএনপির প্রার্থী।' দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, 'খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ধানের শীষে ভোট দিন।’ 

ভোটের ফল যদি কোনও বার্তা বয়ে আনে, তাহলে বলতেই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ চায়নি দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া খালেদা মুক্তি পান। অর্থাৎ তারা দুর্নীতির বিপক্ষে। টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হতে চলা শেখ হাসিনাও নিশ্চয়ই এই বার্তাকে গুরুত্ব দেবেন। কিন্তু যাদের নিয়ে এত হইচই, সেই জামাত এদিন দুপুরেই বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। 

বিকেল পাঁচটায় ভোট নেওয়া শেষ হওয়ার পরেই বুথে বুথে শুরু হয় গণনা। প্রথম রাউন্ড থেকেই দেখা যায় তরতর করে এগিয়ে চলেছে নৌকা। ২০২১-এ স্বাধীনতার ৫০ বছর। সেই বছরকে পাখির চোখ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানা রূপকল্প ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। এবার তা বাস্তবায়নের পালা।

২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৩৪টি আসন জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। 

নির্বাচনের দিন সংঘর্ষের খবরও মিলেছে বাংলাদেশে। শনিবার রাত থেকে ভোটের দিনের রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে মারা গেছে ১৭ জন। এদের মধ্যে শাসকদলের কর্মী বেশি। একদিকে বুথগুলোতে উৎসবের মেজাজে ভোটারদের ভীড়, অন্যদিকে বিরোধীদের ‘রিগিং রিগিং’ নালিশ। যেসব প্রার্থীকে একদিনও প্রচারে বের হতে দেখা যায়নি, তাদের অনেকে শীতের সকালের কুয়াশা কেটে রোদ ওঠার পরে সাংবাদিক ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। 

নতুন দিন শুরু করতে চলেছে বাংলাদেশ। নৌকায় চড়ে আগামী দিনে গণতন্ত্রের সাগরে পাড়ি দেবে দেশটি। এই প্রত্যাশা শুধু বাংলাদেশীদেরই নয়, বর্হিবিশ্বেরও।

Bootstrap Image Preview