৩০ ডিসেম্বর রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মেয়েদের ভোট দেওয়া ইসলামবিরোধী কাজ বলে ফতোয়া দিয়েছেন চাঁদপুর জেলাধীন ফরিদগঞ্জ উপজেলার এক পীর। তার নির্দেশের কারণেই উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা ভোট দেন না।
চাঁদপুরের ৫টি আসনের মধ্যে চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনের ফরিদগঞ্জের রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ১২ হাজার ১১৪ জন নারী ভোটার ৪৭ বছর ধরে পীরের নির্দেশে ভোট দিতে যান না ভোট কেন্দ্রে।
স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় এক পীরের নির্দেশ মেনে ভোট দিতে যান না এ নারী ভোটাররা। এই দীর্ঘ সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় কিংবা জাতীয় কোন নির্বাচনেই তারা কখনও ভোট দেননি।
স্থানীয়রা জানান, ৪৭ বছর ধরেই এই চিত্র চলে আসছে এ ইউনিয়নে। স্থানীয় প্রশাসন বহু চেষ্টা করেও নারীদের ভোট কেন্দ্রে আনতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। এমনকি নারীদের মধ্যে যারা শিক্ষিত, তারাও আসেন না কোনো নির্বাচনে।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৪ হাজার ৪৫৪ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১২ হাজার ১শ’ ১৪ জন। তারা সবাই ভোটার তালিকায় নাম উঠাতে ছবি তুলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রও নিয়েছেন। ভোট না দিলেও নিত্যদিন ঘরের বাইরে যান এই। কিন্তু ভোটের দিন সবাই থাকেন ঘরের ভেতরে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর জৈনপুরের পীরের অনুসারী মাওলানা মোহাম্মদ হাছান মওদুদ নামে স্থানীয় একজন পীর এই ফতোয়া জারি করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তিনি দাবি করেন, মেয়েদের ভোট দেয়া নাজায়েজ কাজ। এরপর ১০টি সংসদ নির্বাচন আর কোনো স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেননি হাজার-হাজার নারী।
ফরিদগঞ্জ রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইসকান্দার আলী বলেন, পীরের নামে গুজব ছড়িয়ে ভোটাধিকার থেকে বিরত রাখা হয়েছে এখানকার নারীদের। প্রতিদিনের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলেও ভোট কেন্দ্রে যান না তারা। ফলে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে কোনও ভূমিকা রাখতে পারেন না এসব নারী ভোটাররা।
চাঁদপুর- ৪ ফরিদগঞ্জ আসনে ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে ১১৮টি ভোট কেন্দ্র এবং ৬১৪টি ভোট কক্ষ রয়েছে। ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯ হাজার ৭৭৬ জন। এ আসনে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৮ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৮ জন।
৯ জন প্রার্থী এ আসনে নির্বাচন করছেন। শুধু মাত্র ফরিদগঞ্জ রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৪ হাজার ৪৫৪ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ১২ হাজার ১১৪ জন। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের এসব নারী ভোটার ভোট দিতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছেন এখানকার সাধারণ মানুষ।
চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটারদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এই নির্বাচনে নারী ভোটারসহ সকলে যাতে ভোট কেন্দ্রে যান, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ আমাদের উপজেলা নির্বাচন অফিসার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।