Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফোনালাপ ফাঁসের শীর্ষে নোয়াখালীর নেতারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৩১ PM
আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৩১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বর্তমান সময়ে ফোনালাপ ফাঁস যেন এক আতঙ্কের নাম। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক অডিও ফাঁস ‘বিপর্যস্ত’ রাজনৈতিক নেতারা। লঙ্ঘন হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা।হুমকির মুখে পড়ছে কারও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। কাউকে কাউকে যেতে হয়েছে কারাগারেও।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের সপ্তাহে হিড়িক পড়ে অডিও ফাঁসের। এই কয়েকদিন সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় অনেক রাজনৈতিক নেতাদের অনেক ফোনালাপ।

এদিকে ফাঁস হওয়া অডিওর সবগুলোই বিএনপিসহ বিরোধী নেতাদের। তবে এসব অডিও বানানো বলে দাবি জানিয়ে এসেছে বিএনপি।

গত কয়েকদিনে ফোনালাপ ফাঁস নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন- (বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর একটি ফোনালাপ), (নোয়াখালী-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের দুইটি অডিও), (বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের একটি অডিও), (গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে শওকত নামে সিলেটের স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের), (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমের একটি অডিও), (যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা রইস উদ্দিনের সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের ফোনালাপ), (রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ফোনালাপের অডিও রেকর্ড)

এছাড়াও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। ছাত্রদলের সাবেক নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর একটি ফোনালাপের অডিওটিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে তাঁদের সমালোচনা করতে শোনা যায়।

মওদুদ আহমদ নোয়াখালী-৫ ও বরকতউল্লাহ বুলু নোয়াখালী-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী।

৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ফোনকলে বুলুকে মওদুদ বলেন, ১৫ দিন ধরে নানান বিষয়ে বললেও দলের মহাসচিব তার কথা শুনছেন না। এখন মহাসচিব তার ফোন ধরছেন না। সারাদিন কল করলেও তিনি রিসিভ করছেন না উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, আগের দিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু কড়া ভাষায় কথা বলার কারণে হয়তো মহাসচিব তাকে এড়িয়ে চলছেন। বুলু তাকে বলেন, মহাসচিব কারো ফোনই ধরেন না। এরপর মওদুদ বলেন, তারেক রহমান রাতে তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তাকে মহাসচিবের ব্যাপারে বলেছেন। বুলু বলেন, মহাসচিব কি সাপের ঠ্যাং দেখছেন নাকি! মওদুদ বলেন, মহাসচিব তারেক রহমানকে বলেছেন, স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সবাই নয়, কয়েকজন আসছেন। মতামত আগেই জানিয়ে দেয়ায় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে তিনি যাননি। মওদুদ বলেন, নির্বাচন করার কথা ছিল আন্দোলন করার জন্য। কিন্তু আন্দোলনের ইস্যুটা কী। কী ইস্যু তৈরি করেছেন আপনারা। ৩০০ প্রার্থী ঢাকায় ডেকে যদি যে কোনো স্থানে বসে যাওয়া যেত তাহলে তা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিত। আমরা বলতাম এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করব না। নির্বাচন কমপক্ষে ১৫ দিন পেছাতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং গত ৮/১০ দিনে যত মামলা হয়েছে সব প্রত্যাহার করতে হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এগুলো ন্যায্য দাবি। মহাসচিব কিছু করেন না, শুধু সংবাদ সম্মেলন করেন, ড. কামাল হোসেনও সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলন করে কী হবে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে মওদুদ বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে কি আন্দোলন হবে নাকি। তখন বুলু বলেন, ৩০০ প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের সামনে বসে বলতে পারত নির্বাচন বন্ধ কর, মওদুদ এতে সায় দিয়ে বলেন, এটাই হতো বিরাট আন্দোলন। এরপরও যদি তারা নির্বাচন করতো তাহলে আমাদের এই আন্দোলন ধারাবাহিকতা পেত।

মওদুদ বুলুকে বলেন, তারেক রহমানকে বলেছি, এখন নির্বাচন যদি একবার হয়ে যায়, ঘোষণা দিয়ে দিবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নির্বাচনে কোনো অসুবিধা হয় নাই ‘নৌকার জয়জয়কার হয়েছে, দেশের মানুষের আমাদের প্রতি আস্থা আছে’- এমনটা বলার পর আন্দোলন করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। তারেক এতে সায় দিয়ে মওদুদকে বলেন, আপনারাইতো নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন মওদুদ বলেন, হ্যাঁ তার পরের পরিস্থিতি তো তৈরি করতে হবে। অনেকক্ষণ কথা বলেছি তারেক রহমানের সঙ্গে।

মওদুদ ও বুলু তাদের গাড়ি ভাঙচুরের কথা পরস্পরকে জানান। মওদুদ বলেন, সেনাবাহিনী আসার পর পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেনা কর্মকর্তাকে ফোন করে গাড়ি ভাঙার বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি। রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করে জানিয়েছি- জীবনের নিরাপত্তা নেই। আমি কী নির্বাচন করব? যেখানে প্রার্থীরই নিরাপত্তা নেই সেখানে ভোটারদের নিরাপত্তা থাকবে কী করে। এসব বলে কোনো লাভ নেই। তখন বুলু বলেন, আমাদের ঢাকায় বসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেই সঠিক হতো। মওদুদ বলেন, মহাসচিব ও তার পিএ পর্যন্ত আমাদের ফোন ধরেন না। বুলু বলেন, তার ফোনও তারা ধরেন না। আব্দুল আওয়াল মিন্টুও ধরেননি মওদুদের ফোন। মহাসচিব কী স্বপ্ন দেখছেন জানেন না উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, তারা কি একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে কিনা? মহাসচিব ও ড. কামাল হোসেন মিলে কি সরকারকে সমর্থন দেবে কিনা এমন সন্দেহ করে তিনি বলেন, যদি তাদের ২০-২২ জন জয়লাভও করে তবে তাদের সরকার ভালো থাকতে দিবে না। মামলা দিয়ে শেষ করে দেবে। তারা কেউ কাজ করতে পারবে না। পৌর ও সিটি মেয়রদের যেভাবে করেছে। ফারুক, খোকন, এ্যানি, আজিম আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে বুলু বলেন, প্রার্থী ও সিনিয়র নেতাদের ওপর হামলা হয় এমন ঘটনা নজিরবিহীন। বুলু বলেন, কৌশল একটা করেন। শেষ ভরসা তারেক রহমানকে ফোন করে আবার সবকিছু বলেন। মওদুদ বলেন, হ্যাঁ ফোন করব। সর্বশেষ বুলুর ফোনেই রহিম নামে এক কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন মওদুদ। তিনি তাকে বলেন, সবই আইওয়াশ। প্রশাসন নিরপেক্ষ নয়।

নির্বাচনের আগের রাতে ফাঁস হয়েছে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের একটি ফোনালাপ। যেখানে তিনি এক কর্মীকে প্রতিরোধের নির্দেশনা দিতে শোনা যায়।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেরদিন ফাঁস হয়েছে নোয়াখালী-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের দুইটি অডিও। একটি অডিওতে শোনা যায় সাক্কু নামের একজনকে বিস্ফোরক পাঠানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। অন্য অডিওতে আলাউদ্দীন নামের এক ব্যক্তির কাছে তাকে লাঠি তৈরির খোঁজ খবর নিতে শোনা যায়।

এদিকে নির্বাচনের চারদিন আগে ২৬ ডিসেম্বর একটি অডিও ফাঁস হয়। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে শওকত নামে সিলেটের স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের ফোনালাপটি প্রকাশ্যে আনে দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। এ ফোনালাপ থেকে জানা যায়, ড. কামাল হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও অডিওতে শোনা কথায় স্পষ্ট হয়, ফোনদাতা শওকতের কথায় খুব একটা গুরুত্ব দেননি মোস্তফা মহসিন মন্টু।

ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথন পাঠকদের জন্য পুরোপুরি তুলে ধরা হলো-

শওকত : মন্টু ভাই আমি শওকত বলছিলাম। বিএলএসএস...

মোস্তফা মহসিন মন্টু : হ্যা শওকত কেমন আছো?

শওকত : আছি ভালো, আপনি কেমন আছেন। আমি একটা ইমপর্টেন্ট খবর দেয়ার জন্য আপনাকে ফোন করলাম। আপনি ড. কামাল হোসেনকে যে কোনোভাবে, কোনো নিরাপত্তার হেফাজতে নিয়ে যান।

মোস্তফা মহসিন মন্টু: আচ্ছা।

শওকত : কারণ, ওনার (ড. কামাল হোসেন) ওপরে এটেপ্ট আছে। সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য। যদি টাকা-পয়সায় কাজ না হয় বিএনপির, তাহলে তাদের লাস্ট... হলো যে, ড. কামাল হোসেনকে হত্যা করা। ড. কামাল হোসেন বিএনপির কেউ না। ওনাকে (ড. কামাল) মারলে তারা (বিএনপি) রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে।

মোস্তফা মহসিন মন্টু: হুম।

শওকত: বুঝছেন, আপনি ইমিডিয়েটলি মন্টু ভাই... আপনি যেহেতু আমার, আমরা এক সাথের। আমি এটা লন্ডন থেকে খবর পেয়েছি, তারেক রহমানের খুব ক্লোজ, আমাদের সিলেটি, কারণ, আপনি জানেন যে লন্ডনে বিএনপির সব নেতাকর্মী হচ্ছে সিলেটের। সে তারেক রহমানের খুব কাছের এবং দুবাই থেকে অলরেডি সাতজন কিলার, পাকিস্তানি বাংলাদেশে ঢুকছে। লাস্ট মোমেন্টে তারা চেষ্টা করবে, ইভেন ইলেকশনের আগের দিন হলেও ড. কামাল হোসেনকে হত্যা করা। আপনি... আমি ডিসি, ডিবিকে বলছি। তারা ইয়ে নিচ্ছে।... আপনাদের কালকে অপমান করেছে ড. কামাল হোসেন, ওই অজুহাতে আপনারা ওনাকে নিয়ে আসেন, কারণ ওনাকে সেভ করা হচ্ছে এখন আপনাদের দায়িত্ব।

মোস্তফা মহসিন মন্টু : ওরা (ডিসি, ডিবি) কোথায় নিয়ে যাবে?

শওকত: ওরা (ডিসি, ডিবি) নিয়ে কাস্টডিতে রাখবে। সেভ কাস্টডিতে।

মোস্তফা মহসিন মন্টু: ওনাকে (ড. কামাল) কাস্টডিতে নিয়ে নিরাপত্তা দিলে তো…

শওকত: বাইরে থাকলে ওনার লাইফ রিস্ক।

মোস্তফা মহসিন মন্টু : না না… ওরা কি গ্রাউন্ডে নিয়ে যাবে?

শওকত: ওনার জীবনের নিরাপত্তার জন্য। গ্রাউন্ড তো ব্যাপার না এখানে মন্টু ভাই।

মোস্তফা মহসিন মন্টু : নিরাপত্তা তো বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেও ছিল না, জাতীয় চার নেতার জেলখানার ভেতরেও ছিল না। আমাদের (পুলিশি) হেফাজতে কি মানুষ মরে না?

শওকত : তা তো মরে, কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য যদি কেউ করে তাহলে এখন…

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের একটি অডিও ফাঁস হয় ২৬ ডিসেম্বর। যেখানে সোনাইমুড়ি উপজেলা বিএনপি নেতা নুরুন্নবীকে নিজের পরিচয় দিয়ে এবং মারামারি হবে জানিয়ে লাঠিসোটা রেডি করতে বলেছেন তিনি।

সিটি নির্বাচন বর্জন নিয়ে ফাঁস হয়েছিল বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ফোনালাপ।

একটি অডিও ফাঁস হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমে। যেখানে তিনি মোহাম্মদ শফিকুল হক নামের এক দলীয় কর্মীকে শিবিরের ছেলেদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগের নির্দেশনা দিতে শোনা যায়

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ফোনালাপের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। ওই রেকর্ডে মাসুদ নামের এক লোককে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চরম নাশকতার মাধ্যমে দেশে অচলাবস্থা তৈরি করার কথা শোনা যায়।

কিছুদিন আগে ফাঁস হয় যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা রইস উদ্দিনের সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের ফোনালাপ।

Bootstrap Image Preview