Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মওদুদ ও বুলুর ফোনালাপের কথা স্বীকার করলেন নজরুল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০৩ PM
আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর একটি ফোনালাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভেসে বেড়ায়, যেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে তাঁদের সমালোচনা করতে শোনা যায়। এই ফোনালাপের কথা স্বীকার করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ঐক্যফ্রন্টের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মওদুদ ও বুলুর ফোনালাপটি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের দুজন নেতা নিজেরা আলোচনা করেছেন। তাঁরা যে কথা বলেছেন, তাতে ছিল ক্ষোভের আওয়াজ। ১০টা বছর পর আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। আমরা অনেক নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু এ রকম অসভ্যতার কোনো নির্বাচন দেখিনি যে প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের কোনো প্রচারণা করতে দেওয়া হবে না।’

মওদুদ আহমদকে প্রচারণায় নামতে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ রকম পরিস্থিতে ক্ষোভে, দুঃখে কেউ কিছু বলতেই পারে।’

সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সরকার ভোটের আগে ভোটের বাক্স ভরে ফেলবে এবং জাল ভোট দেবে বলে অভিযোগ বিএনপির এই নেতার।

সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, তফসিল ঘোষণার পর গতকাল পর্যন্ত তাঁদের দলের ১১ হাজার ৫০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ২ হাজার ৮৯৬টি। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ২৫২ জন। আর মারা গেছেন নয়জন। তিনি জানান, ঐক্যফ্রন্টের ১৭ জন প্রার্থী এখন কারাগারে।

এদিকে ৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ফোনকলে বুলুকে মওদুদ বলেন, ১৫ দিন ধরে নানান বিষয়ে বললেও দলের মহাসচিব তার কথা শুনছেন না। এখন মহাসচিব তার ফোন ধরছেন না। সারাদিন কল করলেও তিনি রিসিভ করছেন না উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, আগের দিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু কড়া ভাষায় কথা বলার কারণে হয়তো মহাসচিব তাকে এড়িয়ে চলছেন। বুলু তাকে বলেন, মহাসচিব কারো ফোনই ধরেন না। এরপর মওদুদ বলেন, তারেক রহমান রাতে তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তাকে মহাসচিবের ব্যাপারে বলেছেন। বুলু বলেন, মহাসচিব কি সাপের ঠ্যাং দেখছেন নাকি! মওদুদ বলেন, মহাসচিব তারেক রহমানকে বলেছেন, স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সবাই নয়, কয়েকজন আসছেন। মতামত আগেই জানিয়ে দেয়ায় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে তিনি যাননি। মওদুদ বলেন, নির্বাচন করার কথা ছিল আন্দোলন করার জন্য। কিন্তু আন্দোলনের ইস্যুটা কী। কী ইস্যু তৈরি করেছেন আপনারা। ৩০০ প্রার্থী ঢাকায় ডেকে যদি যে কোনো স্থানে বসে যাওয়া যেত তাহলে তা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিত। আমরা বলতাম এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করব না। নির্বাচন কমপক্ষে ১৫ দিন পেছাতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং গত ৮/১০ দিনে যত মামলা হয়েছে সব প্রত্যাহার করতে হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এগুলো ন্যায্য দাবি। মহাসচিব কিছু করেন না, শুধু সংবাদ সম্মেলন করেন, ড. কামাল হোসেনও সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলন করে কী হবে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে মওদুদ বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে কি আন্দোলন হবে নাকি। তখন বুলু বলেন, ৩০০ প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের সামনে বসে বলতে পারত নির্বাচন বন্ধ কর, মওদুদ এতে সায় দিয়ে বলেন, এটাই হতো বিরাট আন্দোলন। এরপরও যদি তারা নির্বাচন করতো তাহলে আমাদের এই আন্দোলন ধারাবাহিকতা পেত।

মওদুদ বুলুকে বলেন, তারেক রহমানকে বলেছি, এখন নির্বাচন যদি একবার হয়ে যায়, ঘোষণা দিয়ে দিবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নির্বাচনে কোনো অসুবিধা হয় নাই ‘নৌকার জয়জয়কার হয়েছে, দেশের মানুষের আমাদের প্রতি আস্থা আছে’- এমনটা বলার পর আন্দোলন করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। তারেক এতে সায় দিয়ে মওদুদকে বলেন, আপনারাইতো নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন মওদুদ বলেন, হ্যাঁ তার পরের পরিস্থিতি তো তৈরি করতে হবে। অনেকক্ষণ কথা বলেছি তারেক রহমানের সঙ্গে।

মওদুদ ও বুলু তাদের গাড়ি ভাঙচুরের কথা পরস্পরকে জানান। মওদুদ বলেন, সেনাবাহিনী আসার পর পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেনা কর্মকর্তাকে ফোন করে গাড়ি ভাঙার বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি। রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করে জানিয়েছি- জীবনের নিরাপত্তা নেই। আমি কী নির্বাচন করব? যেখানে প্রার্থীরই নিরাপত্তা নেই সেখানে ভোটারদের নিরাপত্তা থাকবে কী করে। এসব বলে কোনো লাভ নেই। তখন বুলু বলেন, আমাদের ঢাকায় বসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেই সঠিক হতো। মওদুদ বলেন, মহাসচিব ও তার পিএ পর্যন্ত আমাদের ফোন ধরেন না। বুলু বলেন, তার ফোনও তারা ধরেন না। আব্দুল আওয়াল মিন্টুও ধরেননি মওদুদের ফোন। মহাসচিব কী স্বপ্ন দেখছেন জানেন না উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, তারা কি একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে কিনা? মহাসচিব ও ড. কামাল হোসেন মিলে কি সরকারকে সমর্থন দেবে কিনা এমন সন্দেহ করে তিনি বলেন, যদি তাদের ২০-২২ জন জয়লাভও করে তবে তাদের সরকার ভালো থাকতে দিবে না। মামলা দিয়ে শেষ করে দেবে। তারা কেউ কাজ করতে পারবে না। পৌর ও সিটি মেয়রদের যেভাবে করেছে। ফারুক, খোকন, এ্যানি, আজিম আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে বুলু বলেন, প্রার্থী ও সিনিয়র নেতাদের ওপর হামলা হয় এমন ঘটনা নজিরবিহীন। বুলু বলেন, কৌশল একটা করেন। শেষ ভরসা তারেক রহমানকে ফোন করে আবার সবকিছু বলেন। মওদুদ বলেন, হ্যাঁ ফোন করব। সর্বশেষ বুলুর ফোনেই রহিম নামে এক কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন মওদুদ। তিনি তাকে বলেন, সবই আইওয়াশ। প্রশাসন নিরপেক্ষ নয়।

Bootstrap Image Preview